তৃষ্ণা বসাক – “ পানিবাই ” ২

Bharoter Gram_02

শিল্পীঃ সুদীপ চক্রবর্তী

    এ গাঁয়ের অনেক মেয়েরই সকাল সকাল বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের সরকারি বয়সে পৌঁছোনোর অনেক আগেই। শুধু গরিব ঘরে বা নীচু জাতের মধ্যে নয়, বড়ো বড়ো ঘরেও এটাই স্বাভাবিক। ভালো ছেলে পেয়ে গেলে সবাই হাঁকপাঁক করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়। সে সামনে মাধ্যমিক থাকলেও। আর ফুল্লরা তো স্কুলেই যায় না। তারওপর বাবাও নেই। তাই তার এই বয়সে বিয়ে ঠিক হওয়ায় কেউ অবাক হল না। কিন্তু ছেলের বাড়ি কোথায় জেনে সবার চোখ কপালে উঠে গেল। কথায় বলে, ‘কোনও কালে নেই ষষ্ঠীপুজো। একেবারে দশভুজো’। একেবারে বম্বে। বম্বে তো একেবারে কল্পলোক। সেখানে ক্যাটরিনা কইফ, সলমন খান, শাহরুখ খান রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায়। ভোরে সমুদ্র ধরে হাঁটলে বিগ-বি-র সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে। সেখানে শ্বশুরঘর করতে যাবে কাওরাপাড়ার ফুল্লরা কাওরা!

    ফুল্লরার বন্ধুরা শুনে বলল, ‘তোর নাকি শাহরুখ খানের সঙ্গে বিয়ে!’

    যদিও ঠাট্টা, তবু ফুল্লরার বুক তিরতির করে কেঁপে উঠল। সত্যি তার বিয়ে, তাও আবার বম্বেতে! মাঠে গোবর কুড়োনো, সেফটিপিন দিয়ে ফ্রক আঁটা, সবার শেষে জল নেওয়া – এই ছেঁড়াফাটা, তালিমারা জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে তার? শাহরুখ খান না হোক, তার বরের নাকি মেলা জমি-জিরেত, এখনকার মতো ভাতের ভাবনা থাকবে না বিয়ের পর। কিন্তু তাদের গাঁয়ের লোকগুলো কি হিংসুটে, কেউ একবেলা ভাত দেবে না, কিন্তু কু গাইতে ওস্তাদ। তাদের কাওরা পাড়ার বউ-ঝি থেকে শুরু করে, যে-বাবুদের বাড়ি মা কাজ করে, তারাও বলছে, ‘হুট করে কোথায় বিদেশ বিভূঁইয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেললে, জানো তো, বিয়ের নাম করে মেয়ে পাচার চক্র চলছে রমরমিয়ে, মেয়েগুলোকে দিয়ে কী যে করাবে –’

    তার ধলাদাদু তাকে পাচার করে দেবে! ভাবলেও হাসি পায়। বাবা মারা যাবার পর এই দাদুই তো তাদের টেনেছে সাধ্যমতো। ধলাদাদু, মার কীরকম কাকা হয়, বম্বেতে একটা ফ্ল্যাটে পাহারাদারের কাজ করে। সেই এনেছে সম্বন্ধটা। ছেলের বাড়ি বম্বে শহর থেকে একটু দূরে। বিটটলপুরা বলে একটা গাঁয়ে। ছেলের বয়স নাকি একটু বেশি। ছেলের এক মেসো কলকাতায় থাকে, সেই এসে দেখে গেছে ফুল্লরাকে। মা যেদিন তাকে নীল শাড়ি পরে সেজেগুজে থাকতে বলেছিল, সেইদিনই। মেসোর নাম ভগবান দাস। পাকানো গোঁফ মোচড় দিতে দিতে সেই ভগবান দাস ফুল্লরাকে একটা প্রশ্নই করেছিল –

    ‘পিনে কা পানি আনতে কতদূর যেতে হয় বেটি?’

    প্রশ্ন শুনে অবাক হয়েছিল, কিন্তু ঠিকঠাক উত্তরই দিয়েছিল। খুশি হয়েছিল ভগবান দাস। কে জানে, এক ঘণ্টা দু-ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর কথা তাকে এত মুগ্ধ করেছিল কেন। হয়তো সে পরখ করে দেখতে চাইছিল ফুল্লরার ধৈর্য, সহ্যক্ষমতা, তারপর ফুল্লরাকে সুপুরি, রুপোর টাকা ও জরিন শাড়ি দিয়ে আশীর্বাদ করে চলে গেছিল ভগবান দাস।

    কয়েকদিনের মধ্যেই নিত্য শাহর বাড়ি কাজ করতে করতে ফোনে শুভ খবর পেয়েছিল সনকা। ফুল্লরাকে ওদের পছন্দ হয়েছে। কিন্তু জমি-জিরেত ছেড়ে ছেলে বিয়ে করতে আসতে পারবে না। ফুল্লরাকেই যেতে হবে। তাকে নিয়ে যাবে ভগবান দাস।

    এতদিন গাঁয়ের লোকের নানান কথাতেও সনকার মন টলেনি। কিন্তু এখন বিয়ে হবে শুনে সে কেমন কেঁপে উঠল। বিদেশ-বিভূঁই জায়গা, ভাষাও অন্য, মেয়েটাকে সে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে, সব সে জানে, আর কী-ই বা করার আছে তাঁর? কিন্তু সাতপাকটা অন্তত যদি তার সামনে হয়ে যেত, বুকটা আঁটা থাকত। এই ভগবান দাস, যাকে সে একদিন মাত্র দেখেছে, তার হাতে একটা উঠতি বয়সের মেয়েকে সঁপে দেবে? ফোনের মধ্যে তার আশঙ্কা টের পেয়েছিল ভগবান দাস, সে আশ্বস্ত করেছিল সনকাকে। ‘আরে বেটি, ঘাবড়াও মৎ। তোর মেয়েকে আমি কোনও কোঠিতে বেচতে যাচ্ছি না। সোজা শাদির মণ্ডপে নিয়ে গিয়ে তুলব। আর তোর চাচা তো আছেই ওখানে।’

    নির্দিষ্ট দিনে ভগবান দাস তাকে নিতে এসেছিল। নিত্য শাহ-র বউয়ের দেওয়া একটা পুরোনো কাপড়ের ব্যাগে টুকিটাকি জিনিস গুছিয়ে নিতে নিতে ফুল্লরা আবিষ্কার করেছিল মা কখন যেন নীল শাড়িটা তার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এতদিন ঘোরের মধ্যে থেকে সে ভাবেইনি বিয়ে মানে মাকে  ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাওয়া। নীল শাড়িটা তার সেই ভুলে থাকা ব্যাথাটা খুঁচিয়ে দিয়েছিল। বিছানায় উপুড় হয়ে কেঁদেছিল ফুল্লরা।

    নতুন জায়গায় ঘুম আসতে দেরি হয়। কিন্তু বিটটলপুরায় এসে বিছানায় পিঠ ঠেকাইতেই ঘুম এসে গেল ফুল্লরার। কারণ দুদিনের ট্রেন জার্নিতে সে প্রায় ঘুমোয়নি বললেই চলে। মাকে ছেড়ে এতদূর চলে আসার কষ্ট একটা ফোড়ার মতো টাটিয়ে ছিল বুকের মধ্যে, তার ওপর অচেনা একটা লোকের সঙ্গে আসা, প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল হিংস্র নেকড়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।

    স্টেশনে নেমে ধলাদাদুকে দেখে ওর মন অনেক হালকা হয়ে গেল। ধলাদাদু আজ যেতে পারছে না, তবে বিয়ের দিন অবশ্যই যাবে। তারপর দুবার বাস পাল্টে সন্ধে নাগাদ বিটটলপুরায় এসে পৌঁছোল।

    বাস থেকে নেমে সে দেখল পুরো গ্রামটা অন্ধকারে ডুবে আছে। মাঝে মাঝে টিমটিমে লণ্ঠনের আলো। গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। বাস থেকে নেমে কাঁচা সড়ক দিয়ে অল্প একটু হেঁটে ওর শ্বশুরবাড়ি। একটা লোক আলো নিয়ে এগোতে গেছিল। উঠোন ঘিরে ছড়ানো ঘর। লণ্ঠনের আলোয় ও বুঝতে পারল না ভালো। ওরা ঢুকতেই একদল বাচ্চা ছুটে এল। ওদের চিৎকার থেকে একটাই শব্দ বুঝতে পারল ফুল্লরা।

    ‘পানিবাই! পানিবাই!’

    কাকে বলছে কথাটা? নতুন বউকে এরা পানিবাই বলে নাকি?

    ওকে হাত-পা ধোবার জায়গা দেখিয়ে দিতে গেল এক মহিলা। খুব শক্ত, হাড়-হাড় চেহারা, রাগি মুখ। সে দাঁতে দাঁত চেপে যা বলল, তা থেকে মোদ্দা কথা বুঝে নিল ফুল্লরা। মহিলা ওকে বলছে, একটা শুখা দেশ, বাংলার মতো হরা-ভরা নয়, তাই পানি কম খরচ করতে হবে।

    তাদের ঘটকপুকুরে তাকে খাবার জল পাবার জন্যে সবার পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়াতে হয়েছে সত্যি, কিন্তু সে তো অন্য কারণে। সেখানে জলের ছড়াছড়ি। বাড়ির পেছনে হাঁসপুকুরে তারা ঝাঁপাঝাঁপি করে চান করত। আর এখানে দু-এক ঘটিতে তো পুরো গা-ও ভিজবে না। রাতের খাবার মোটা মোটা রুটি আর বিচ্ছিরি স্বাদের একটা সবজি খেতেও ওর তত কষ্ট হচ্ছিল না, যতটা জলের জন্য হচ্ছিল।

    রাতে ওকে শুতে দেওয়া হল একটা বুড়ির সঙ্গে। তাদের দেশে বয়স হলে সাদা বা হালকা খোলের শাড়ি পরে, এ বুড়ি পরে আছে ক্যাটকেটে সবুজ রঙের শাড়ি। তবে মানুষটা এমনি খারাপ না। শুয়ে শুয়ে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর বিড়বিড় করে কী সব বলছিল। একসময় বুড়ির হাত ওর কোমরে এসে থামল। কোমর টিপে টিপে বুড়ি যেন কী পরখ করার চেষ্টা করছে। হাতটা সরিয়ে দেবার চেষ্টা করতে করতে ফুল্লরা কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল, সে নিজেও জানে না। মাঝরাতে হঠাৎ কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙল। বিছানা হাতড়ে দেখল বুড়িটা নেই। ঘরের বাইরে থেকে মেয়েগুলোর কান্না আর পুরুষের চিৎকার ভেসে আসছে। শুনতে শুনতে ফুল্লরা আবার ঘুমিয়ে গেল।

    পরদিন ঘুম ভাঙল শক্ত এক হাতের ধাক্কায়। সেই রাগি রাগি বউটা ওকে ঠেলা দিচ্ছে।

    ‘এত বেলা অবদি ঘুমোলে পানি মিলবে?’

    কে যেন পাশ থেকে বলল,  ‘আহা, সে তো আজই নয়, আগে শাদি হোক।’

    আরে রাখো তোমার শাদি, আজ যদি ঝুঁটি ধরে না তুলি, তবে আদত পড়ে যাবে বিছানায় শুয়ে থাকার।’

    আরেকটা বউ অমনি ঝনঝন করে হেসে উঠল, ‘আহা কোন সুখে বিছানা আঁকড়ে থাকবে বলো, সে তো তুমিই দখল করে আছ!’

    এই কথা শুনে রাগি বউটি দপদপ করে চলে গেল। অন্য বউগুলো, যারা ফুল্লরার বিছানার চারদিক ঘিরে ছিল, তারা বলল, ‘জলদি জলদি উঠে পড়, আজ না তোর শাদি?’

    তাদের গাঁয়ে ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’ বলে একটা কথা আছে। কিন্তু ফুল্লরার বুক কেমন ধক্ করে উঠল শুনে। ‘আজই শাদি! ধলাদাদু যে বলল তিনদিন পরে?’

    ‘আহা, এই তিনদিন পানি আনার জন্য অন্য বাই রাখবে নাকি?’

    আসা থেকেই ‘পানি’ শব্দটা কতবার শুনেছে ফুল্লরা। মাথায় এখন যেন সেই জল টলটল করে উঠল। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিল ও। বউগুলো চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘হায় হায়! এই দুবলা পাতলি লেড়কি কী করে পানিবাই হবে? ভগবানচাচা কেমন মেয়ে ঢুঁড়ে আনল!’

    পাশ থেকে কে যেন বলল, ‘আশেপাশের গাঁয়ে তো কেউ রাজি হল না। ভগবানচাচা তাই বলল, বাঙালি লেড়কিরা কথা শোনে, তার ওপর বাপও নেই।’

    বিয়ের মণ্ডপে বসেও ফুল্লরার মাথায় টলমলানি যাচ্ছিল না। পানিবাই! পানিবাই মানে কী! নতুন বউকে এদেশে পানিবাই বলে নাকি? ভগবানচাচাকে ও কোথাও দেখতে পাচ্ছিল না। পেলে বলত মাকে ফোনে ধরে দিতে। মা এখন নিত্য শাহ-র বাড়ি ঘর মুছতে মুছতে জানতেও পারছে না তার মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

    নিজের চিন্তায় এতখানি ডুবে ছিল ফুল্লরা, যে সে বুঝতেও পারেনি বিবাহমণ্ডপে কখন বর এসে হাজির হয়েছে। বাচ্চাদের ‘দুলহা আ গয়া, দুলহা আ গয়া’ চিৎকারে সে সচকিত হয়ে দেখল তার সামনে এক দীর্ঘদেহ, প্রশস্ত বক্ষ মানুষ, এদেশের রীতি অনুযায়ী মুখ ঢেকে এসে দাঁড়িয়েছে। ফুল্লরার বুক দুরদুর করে উঠল, সমস্ত ভয়, সন্দেহ, অপমান, ক্ষুধা দূর হয়ে যাবে এইবার। তার কল্পলোকের শাহরুখ খান এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে বরমাল্য হাতে। কে যেন চেঁচিয়ে বলল, ‘মুখ খোলো কিষণলাল।’ দুলহা মুখের ওপর থেকে চাঁদমালার মতো ঢাকা সরিয়ে নিল। অমনি ফুল্লরার নাকে এসে লাগল একটা পচা গন্ধ। বাবাকে জল থেকে তোলার পর যেমন গন্ধ বেরোচ্ছিল। কিন্তু সত্যি সত্যি তো এমন গন্ধ কোথাও নেই। চারদিকে ঘিরে থাকা বউ-মেয়েরা সুগন্ধি ফুল ছুঁড়ছিল, কিষণলাল কড়া সেন্ট মেখে আছে, তবে? আসলে বুড়ো মানুষদের শরীর থেকে একধরনের পচা গন্ধ বেরোয়, শিথিল চামড়া, নড়া দাঁতের গন্ধ, বহু বছর দুনিয়া দেখে ভেতরটা পচে যাবার গন্ধ। সামনে দুলহা সেজে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে, তার বয়স সত্তরের কম নয়। লোকটা ভাবলেশহীন চোখে ফুল্লরাকে দেখছিল, আর ফুল্লরার ষোলো বছরের সবুজ লাউডগা শরীর গুলিয়ে উঠছিল। এই তার শাহরুখ খান! সে মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে গেল।

    জ্ঞান ফিরতে দেখল, সেই বুড়ি মহিলা তার চোখেমুখে অল্প অল্প জলের ছিটে দিচ্ছে। জলের স্পর্শে আরাম হচ্ছিল ফুল্লরার। আবার মায়ের কথাও মনে পড়ছিল। সে ডুকরে কেঁদে উঠতেই বুড়ি তাকে প্রবোধ দিয়ে বলল, ‘দুলহার বয়স আর রূপ দেখে ফালতু কষ্ট পাচ্ছিস। যেমন না-কা-ওয়াস্তে শাদি, তেমন না-কা-ওয়াস্তে পতি। তোর আসলি মরদ তো ওইটা।’ বলে কী যেন একটা আঙুল দিয়ে দেখায় বুড়িটা। আর আঙুল অনুসরণ করে ফুল্লরা দেখে ঘরের কোণে একটা পিতলের বিশাল কলশি। গড়নটা তাদের দেশের তুলনায় খানিকটা আলাদা, কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক বেশি ভারী। এতে করে জল আনতে গেলে মোষের শক্তি দরকার। আচমকা তার মাথায় পরপর কিছু দৃশ্য-শব্দ খেলে যায়, গত রাতে বুড়ির তার কোমর পরখ করা, দুবলি-পাতলি বাঙালি, পানিবাই! সে-ই পানিবাই নয়তো?

    কন্নায় তার শরীর ফুলে ফুলে ওঠে। বুড়ি তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘পাগলি কাঁহিকা! এখনও বরের বয়স ভাবছিস বসে বসে। আরে, ও তোকে কোনওদিনই বিছানায় নেবে না। সে তো আছেই আশাবাই। ধরমপত্নী। তবে কি না, পুরুষের কাম, কখন কাকে দেখে জেগে ওঠে। কুছ সাল পহলে, এক বরসাতের রাতে, আশাবাই বাচ্চা বিয়োতে মাইকে গেছে, আমাকে ডাকল। তা কী করে না বলি বল, পানিবাই হলেও বউ তো বটে। শরীরের স্বাদ পেয়েছিল তো, তাই আমায় তাড়ায়নি। এখন তো আর পানি আনতে পারি না, তাও রেখে দিয়েছে। অথচ কত পানিবাই এল আর গেল।

    কান্না থামিয়ে বিস্ময়ে হতবাক ফুল্লরা বুড়ির দিকে তাকায়। এই বুড়ি কিষণলালের বউ!

    বুড়ি বলে চলে, ‘আসলি বাত কী জানিস? এ হল শুখা দেশ। সহজে পানি মেলে না। পানি দু-তিন গাঁও ভেঙে আনতে যেতে হয়। সকালে গেলে ফিরতে ফিরতে বিকেল তিনটে-চারটে। তা ঘরের বউ যদি পানি আনতে যায়, তবে ঘরের কাম-কাজ কী করে চলবে, খানাপাকানো, বালবাচ্চাদের পালপোষ কে করবে? তাই পানিবাইদের দরকার। শাদি তো একটা হচ্ছে, তাই মাইনে দিতে হয় না, ডাল-রুটি তো মিলবে দুবেলা। তা, কিষণলালের খুব বদনাম, বউটাও রাগি, তাই এখানকার কেউ আর পানিবাই হয়ে আসতে চায় না। একজনকে তো পিটিয়েই …’ বুড়ি কী যেন বলতে গিয়ে চুপ করে যায়। ফুল্লরা হাঁটুর ওপর মুখ রেখে সেই নিঃশব্দ্য থেকে কিছু খুঁড়ে বার করার চেষ্টা করে, জলের মতো। শুখা দেশে চোখের জলও যে শুকিয়ে যায়, কে জানত!

ক্রমশ প্রকাশ্য...
তৃষ্ণা বসাক – “ পানিবাই ” ১
তৃষ্ণা বসাক – “ পানিবাই ” ৩
Close My Cart
Close Wishlist
Recently Viewed Close

Close
Navigation
Categories

Add address

India