তন্বী হালদার – “ সঙ ” ১

Soong

শিল্পীঃ সুদীপ চক্রবর্তী

(১)

আয়ানের খোকাটাকে দড়ির দোলনায় দোল দিতি দিতি কৃষ্ণের খুব বিড়ির তেষ্টা পায়। কিন্তু কচি ছেলের সামনে ফুঁক ফুঁক করি ধোঁয়া ছাড়া মোট্টে ভালো কথা নয়। কৃষ্ণের মনে অনেক চিন্তা। এবার দোলে খুব বেশি বায়না হয়নি তাদের। গেল বারেও ফাল্গুন, চৈত্র দুটো মাস ধরে ফি দিনই বায়না ছিল। দম ফেলার ফুরসৎ ছিল না। অবশ্যি এজন্যি কৃষ্ণ মনে মনে বেশ খুশিই। ঐ টুকুন ছেলেডারে নে এ প্রান্তর ও প্রান্তর করি বেড়ালে বাছার শরীল টিকতোনি। আয়ানের বৌ বাচ্চা বিইয়ে সাড়ে তিন মাসে ভেগে গেছে। উফ বাপরে বাপ তারপর থেকি কি সেগোস্তো। বাছা তো বুকের দুধের নেশায় টাস দে কাঁদে, আর আয়ান বিড়ির খোলে গাঁজার পুরিয়া ভরে দম দে এ জগৎসংসার থেকি ভোঁকাট্টা হয়ি আছে। রাধুটা তো জন্মহারামী। এদ্দিন দলের সুঙ্গি আছে, অথচ কারও প্রতি কোনো টান নেইকো।  সত্যভামা, রুক্মিণী, বিশাখা, ললিতা যখন যাকে পাচ্ছে তার সুঙ্গি ঢলাঢলিতে মেতি আছে। আর ওরাও হয়েছে তেমন ‘রাধুদা’ বলতি অজ্ঞান। শয়তান। মনে মনে চার অক্ষরের একটা খিস্তি দেয় কৃষ্ণ। যত জ্বালা হয়েছে এই কৃষ্ণের। দু’বেলা পাত পেরে সব কি গিলবে, তার থেকি কোথায় কখন কি পালার বায়না হবে সব হিসেব রাখতি হয় তাকে। এখন অবশ্যি আয়ানের এই ছোট্ট ছেলেডা সব সময় তার বুক জুড়ে আছে। কৃষ্ণ ওর নাম রেখেছে সুদর্শন। তবে আদর করবার সময় ‘লাট্টু’ বলেই ডাকে। তা সে লাট্টুর মা ভেগে যাওয়ার পর আয়ান ঠিক করেছিল, বেড়ালের বাচ্চার মতো কোথাও একটা ফেলে দে আসবে। তখন রুখে দাঁড়িয়ে ছিল এই কৃষ্ণই। মঞ্চে যেমন করে কালীয় নাগের মাথায় চেপি তাকে বধ করে, তেমনি করে আয়ানের টুটি চেপি ধরেছিল। গর্জে উঠেছিল, ‘খপরদার আমার জান থাকতি এ কম্মর কথা ভেবেছিস তো জ্যান্ত পুঁতি ফেলবানে’। মঞ্চের ওপর এক মাথা কোঁচকানো ঝাঁকড়া চুল ঝাঁকিয়ে কৃষ্ণ যেমন দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করে সেদিন তেমন ভাবেই সে অবতীর্ণ হয়।

এ দলের হেড হচ্ছে কংস। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরি তার শরীরের নানা ব্যামোর জন্যি সে খাবি খেয়ে যাচ্ছে। ওর মাথাতেই প্রথম আসে দলে অন্তত একডা ফিমেল থাকা দরকার। নারকেল মালার ওপর ব্রেসিয়ার পরে মেয়ে মানষের ঠমক এখন আর পাবলিক খায় না। রাধুর সঙ্গি সে নিয়ে প্রচুর ফাইটিংও হয়েছে। আর তখনই আয়ান শালা একডা ধেড়ে ছুড়ীকে কোত্থেকে নে এসে বলে, ‘গাঁ থেকি নে আলাম গো। আমার বৌ। বে করেছি মন্দিরতলার কালীমন্দিরে। ধম্মস্বাক্ষী মেনি। নেও ইবার পড়েপিটে নাও’। এত খচ্চর একিবারে বৌ করি নে আলে যাতে আর কেউ হাত না বাড়াতি পারে। তবে একদিন ঐ বে’র জন্যি জব্বর খাওয়া দাওয়া হয়িছিল। কেন জানি কৃষ্ণের প্রেথ্থম দিনই মনে হয়িছিল, ‘এ মাল জাত সরেস, এর মাল টিকবে নি’।

আয়ানের বৌটা প্রেথ্থম থেকেই কংসের গা ঘেঁষা ছিল। পূর্ণিমা, অমাবস্যায় ইছামতীর জলের সুঙ্গি পাল্লা দে যখন কংসের বাতের ব্যথায় পা ফুলে থোড় হত তখন সরষের তেল, কালোজিরে রসুন দে গরম করি নে এসে কি সোহাগ, ‘কৈ গো কংসদা দেও দেখি পা দু’খানা এট্টুস সেবা করি দিই’। শয়তানি। আস্ত শয়তানি। কৃষ্ণের তো মধ্যি মধ্যি সন্দেহ হয় ‘লাট্টুর আসল বাপ কংস নয় তো’। পরক্ষণেই জীভ কাটে সে। ছি ছি এসপ কি ভাবছে সে। পাপ, পাপ ঢুকেছে তার মনে। কথায় তো বলে, ‘জন্ম হোক যথা তথা কম্ম হোক ভালো’। লাট্টুকে বুকের মধ্যি তুলে নেয় কৃষ্ণ। সেই লাট্টুর পালক পিতা। লাট্টু তো তার ‘সুদর্শন’। যে সুদর্শন দে ভগবান কৃষ্ণ কত পাপীর বিনাশ করিছে এ হল তার সেই ‘সুদর্শন’। লাট্টুর কপালে চুমো দেয় কৃষ্ণ। দু’ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ে লাট্টুর গালে। আর তখনই নজরে আসে আয়ান এই সক্কাল বেলাই চাড্ডি মদ গিলে বাওয়াল করছে উঠোনের ওপাশের নিম গাছতলায়। তাকে ঘিরে শুধু রাধু, সত্যভামা, রুক্মিণী, বিশাখা, ললিতা না, বড়ো জিরাকপুর গাঁয়ের মানুষদেরও বেশ জমজমাট ভীড়। বিনি পয়সায় তামাশা দেখছে সক্কলে। কৃষ্ণের মনে হয় সেখানে গে আয়ানের মুখি দুই লাথ কষায়। রাধুটা চীৎকার করি ওঠে, ‘ও কেষ্টদা বসি বসি খালি লাট্টুর মুতির কাঁথা বদলালে হবে? এসোগো এখানে। আয়ান আমাদের কি সুন্দর গান বেঁধিছে দেখো’। বলে নিজেই হেঁড়ে গলায় বেখাপ্পা সুর করি গাইতে থাকে, ‘লাট্টু বাবু যায় / ইদিক উদিক চায় / কংস আর আয়ান ভেবি মরে / বাপ কেডা হয়’। কৃষ্ণ আর সহ্য করতি পারে না। লাট্টুকে ঝপাং করি দোলনায় ফেলি দাওয়ার পাশে পড়ে থাকা একডা ছোটোপানা বাঁশ ঘাড়ে করি নে ছুট্টে যায়। কৃষ্ণকে ঐ ভাবে তেড়ে খিঁচে আসতে দেখি ভীরটা পাতলা হয়ি যায়। বিশাখা এসে বাঁশ চেপি ধরে। বলে, ‘করছিস কি কেষ্টাদা? মাথা খারাপ হয়ি গেল নাকি? এক্ষুনি একডা খুন-খারাপি হয়ি গেলে সারা জেবন জেলের ঘানি টানতে হবে, নইলে ফাঁসীতে লটকাতে হবানে। ছেলে মানুষ করা তখন পোঁদে ঢুকি যাবানে’।

ক্রমশ প্রকাশ্য...
সমীরণ কুণ্ডু– “ ব্যক্তিগত ”
তন্বী হালদার – “ সঙ ” ২
Close My Cart
Close Wishlist
Recently Viewed Close

Close
Navigation
Categories

Add address

India