সরকারি ভ্যাট উপচে জঞ্জালের পাহাড় রাস্তায়। গাড়ি-ঘোড়া, লরি, মটোর সাইকেল – এমন কি মানুষ-চলাচল দায় হয়ে উঠেছে। তার ওপর ছানা-পোনা-ধাড়ি শুয়োরের মৌরসিপাট্টায় ল-অর্ডারের সমস্যা। কোনো পুঁচকি বাচ্চাও যদি বে-সতর্কে গাড়ির নিচে পড়ে, ধুন্দুমার কাণ্ড হয়ে যাবে। আস্তাকুঁড়ের দুপাশেই সার সার গাড়ি নড়বে-চড়বে না। দরকার হলে দু-চারখানাকে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। একেই শুয়োর জাতির আবেগের তাণ্ডব।
শেষে একদিন থানা ফোর্স পাঠিয়ে, লাঠিচার্জ করে জঞ্জালের পাহাড় শুয়োরমুক্ত করে দিল। পাবলিকের স্বস্তি। হলে কি হবে, দলে দলে কোথ্থেকে গোরু এসে নির্বিঘ্নে রাস্তা জুড়ে ডাঁই চিবোতে থাকে। কাদের গোরু, ব্যবসা করে কারা – তদন্তেও বেরুতে চায় না। গোরুগুলো খোসা, পচা, প্লাস্টিক থেকে বিয়ে বাড়ির কাগজের থালা, রাংতা সবই খাচ্ছে আজকাল।
ব্যাপারটা যে জনগণের স্বার্থ-বিরহী – একজন গোরু-উকিল মেনে নিল। ঘাস-খড়-ভুষিখাওয়া দুধের বদলে, এ-সব খেলে, যে দুধ বেরুবে, তার ছানা-পনির দই থেকে নির্ঘাত ক্যানসার, হার্টঅ্যাটাক, জন্ডিস্ – মায় অজানা জ্বরেও মরতে পারে। গোরু-উকিল দলবলকে বলল, তোমাদের এ অধঃপতন কেন? যারা ঘাস-বিচুলি ভুষি খেতে, এখন এসব গিলছ?
গোরুদের একজন করুণ মুখে জানাল, আমাদের পালুয়েদের বলুন। … ছোলা-ভুষি-খড়ের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, ফ্ল্যাটের বন্যায় ঘাসটুকু নেই … আমাদের ভোরেই রাস্তায় খেদিয়ে, রাতে ওলানে জল ছিটিয়ে দুধ নিংড়ে, দড়ি বাঁধা করে, ফের সকালে ছুটি … জঞ্জাল দিয়ে পেট না ভরালে আমরাই বা বাঁচি কি ভাবে।
গোরু-উকিল বল্লেন, কোর্টে যাচ্ছ না কেন দলবেঁধে … মালিকেরা ক্ষতিপূরণে বাধ্য … সম্পূর্ণ বে-আইনি কাজ হচ্ছে।
বৃদ্ধ গরুটি অবাক।
কোর্টে? টাকা কোথায়? বিনে পয়সায় কে লড়বে আমাদের হয়ে?
বেশ। ক্ষতিপূরণের টাকা যদি পেয়ে যাও, পঁচিশ পার্সেন্টে রাজি আছ তোমরা?
আমাদের গোরু-মাথা। অঙ্ক বুঝি না। খবরের কাগজের মতো খোলসা ভাষায় বলুন।
উকিল হেসে বল্লেন, যাতা বোকো না। খবরের কাগজে বুঝি মানুষ বোঝার ভাষা থাকে না? যাক্ গে যাক্, যদি চার লাখ ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিতে পারি তোমাদের, আমাকে এক লাখ দিতে হবে। … মামলা চলাকালীন কিছু দিতে হবে না।
গোরু-রা মহা খুশিতে রাজি। জনস্বার্থ বিঘ্ন বলে আদালতে কেস্ উঠল। সওয়াল চলল। এবং গোরু-উকিলের কেরামতিতে কেসও জেতা হল। ক্ষতিপূরণ চার লাখ টাকা।
গোরুবৃন্দ আস্তাকুঁড়-মুখো হল না। টাকার আশায় আশায় ভারি আনন্দে আছে। মালিকরা যার যার গোরু দিনভর বেঁধে রাখে, রাস্তায় বেরুতে দেয় না – বাজার থেকে খোল-খড়-ভুষি কিনে খাওয়ানোর ব্যাপারেও রহস্যজনকভাবে নীরব। গোরুরা পড়ল ফ্যাসাদে। কারণ জানতে এলে, শুকনো মুখে গোরু-উকিল বল্লেন, মালিকরা ডিভিশন বেঞ্চে গেছে, শুনছি দরকারে সুপ্রিম কোর্টেও যাবে।
তালে?
কথা দিয়েছি তোমাদের। .. বিনে পয়সায় লড়ব আপাতত। যদ্দিন লাগে।
আমরা যে একদিনও সইতে পারছি না। গোরুগুলো হাঁচতে শুরু করল।
গোরু-উকিল বল্লেন, দ্বিতীয় রাস্তা, কোর্টের বাইরে বোঝাপড়া করে নেয়া। … রাজি আপনারা? – দিনে এসে আস্তাকুঁড় খেলে, রাতে খানিক খড়ভুষি দিল। দুধের মূল্যবৃদ্ধির অধিকার অবশ্য মালিকদের ছাড়তে হবে।
গোরুরা বল্ল, আমরা অবলা জীব স্যার! … আপনিই পথ বাতলে দিন।
সুযোগে ফের জঞ্জাল উপচিয়ে উঠল। গড়ালো রাস্তায়। পাহাড় হয়ে উঠল। পাছে শুয়োরের দল পুরনো অধিকারে ফিরে আসে, পুলিশ-পাহারা বসল। গরুদেরও যার যার মালিক বাঁধন খোলে না। সুযোগে একদল কুকুর জঞ্জালের পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিল। দুপাশে সারসার যান জট, মানুষের দুর্ভোগ। কেউ কেউ কুকুরদের উদ্দেশে হুমকি ছুঁড়ল, ওখানে কী করছ? ফাকা করে দাও। বৃদ্ধ কুকুর একটি হাই তুলে বল্ল, আমরা সরমার সন্তান। অভিশাপ পর্বে আছি। ধৈর্য ধরতে হবে।
পাবলিক ফ্ল্যাটে যার যার দরজা-জানলা এঁটে দূষণমুক্ত হতে উন্নততর প্রযুক্তির মার্কেট খোঁজ করে। বড্ড দুর্গন্ধ বাতাসে!
সমাপ্ত