স্বাতী গুপ্ত – “সম্পর্কের ডাস্টবিন ”

IMG_20160317_214155

শিল্পীঃ বিজয় দাস

সভ্যতার ক্রম বিবর্তনে নাগরিক সভ্যতা, ক্রমাগত জটিল থেকে জটিলতর জীবন। দ্রুততার সাথে প্রকৃতির সাথে বাড়ছে দূরত্ব। প্রকৃতির পরিবর্তন মন্থর। এই পরিবর্তন দ্রুতগামী। ধূসর চাদরে ক্রমশ আচ্ছন্ন হচ্ছে মানবিক প্রবৃত্তি। নেট নির্ভর আধুনিক যুগ এখানে মানুষের সৃষ্ট সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবক্ষয়ের সম্মুখীন। সামাজিক তথা পারিবারিক সম্পর্কের অবমূল্যায়ন তীব্রভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। প্রায়শই টেলিভিশন এবং সংবাদ পত্রে শিরোনাম অনুভূতিকে আলোড়িত করে। প্রশ্ন জাগে মনে এ কোন আধুনিকতার পথে মানব সভ্যতা। এখানে কৃত্রিম যন্ত্রের নির্ভরতা মানুষের চেয়ে বেশি কাম্য। সম্পর্কের চৌহদ্দি কমে এসেছে, যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের ক্ষুদ্র বৃত্ত; জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের রাঙতা মোড়া নিজস্ব জগৎ। তবুও এই স্বল্প পরিসরে মনের ফাঁকটা বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে।

 সভ্যতার যতো আবর্জনা যা কিছু দূষিত অশোভন বাড়তি তাকে বহন আর ধারণ করার দায়ভার নিঃশব্দে বহন করে চলেছে ডাস্টবিন। অপরিহার্য্য এই ডাস্টবিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য্য, অনায়াসে জঞ্জাল ছুড়ে ফেলে স্বচ্ছ সুন্দর পরিবেশ। জন্মের সময় মানুষের মন থেকে অলিখিত সাদা কাগজ, সদ্যজাত শিশুর চোখের দৃষ্টিতে কোন ভাব প্রকাশ পায় না। সেই নিষ্পাপ দৃষ্টি ক্রমশ বিভিন্ন ভাবের প্রকাশে জটিল হয়ে ওঠে। মানুষের মন এক বর্ণময় আখ্যান। বর্তমানের ব্যস্ত জীবনযাত্রা, সম্পর্কের সীমাবদ্ধকরণ, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির স্বল্প পরিসর অথচ মনের ক্লেদ জমে উঠে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে এখন জটিল মনোরোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। “ Mental health is not a static condition but subject to variations and fluctuation of degree, influenced by both biological and social factors”. ক্রমাগত বেড়ে ওঠা কাউন্সিলিং সেন্টার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের Mental Health Clinic-এ ক্রমবর্ধমান রোগীর সংখ্যা দেখলে সহজেই বোধগম্য হয় মানুষের মন আজ অনেক বেশি অসুস্থ। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটা ডাস্টবিন দরকার, যেখানে সমস্ত মনের অলিগলিতে জমে ওঠা ক্লেদ আর ভুলগুলো অনায়াসে বলা যায়। আর সেই ডাস্টবিনের বিশ্বাসযোগ্যতা আর ধারণ ক্ষমতায় এক নিষ্কলুষ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব হয়। খ্রিশ্চানদের ‘কনফেশন’-এর ব্যবস্থাটি এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী মনে হয়। পাপ কতটা স্খলন হয় এতে নাই বা জানলাম কিন্তু মানসিক চাপমুক্তি নিঃসন্দেহে ঘটে। ঠিক ভুলেই মানুষ, তার ভুল আর অবদমিত ইচ্ছেগুলো যে কোন সম্পর্কের আধারে নির্ভয়ে স্থাপন করতে পারলেই মানসিক স্বাস্থ্য সুন্দর হয়ে উঠবে এতে অনেকটাই হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ ফিরে এসে সুন্দর সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে।

সম্পর্কের এই আধার যে কেউ হতেই পারে বাবা-মা শিশুর বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। আর এক্ষেত্রে বার বার মনে পড়ে যৌথ পরিবারের কিছু বাড়তি সম্পর্কের কথা, সেখানে এমন কিছু সম্পর্ক থাকতো যা হয়ত নিজস্ব বৃত্তের কেন্দ্র থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থিত ছিল কিন্তু কিছু মনের খুব কাছে ছিল তাদের অবস্থান। অন্ধ মনের বন্ধগলিতে জমে থাকা স্তূপীকৃত আবর্জনা যেই আধারে অনায়াসে নির্ভয়ে ছুঁড়ে ফেলা যেত। সাহিত্যের সাথে বারে বারে এমন চরিত্রগুলো আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে। এজমালি উঠানের চারিদিক ঘিরে অনেক ঘরের বাসিন্দাদের নিত্যদিনের খুঁটিনাটি চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দের সাথে পরিচিত উঠানটাই ক্লান্ত অবসরে সাক্ষী হয়ে উঠতো এমনই সম্পর্কের আধারে যন্ত্রণা আর ঠিক ভুলের স্থাপনের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আশ্রয় আর স্নেহের প্রশ্রয়ে অবলীলায় বিকশিত হতো শিশুমন।

অবলুপ্ত সেই সম্পর্ক আজ; প্রতিটি মনের একটা সম্পর্কের ডাস্টবিন আবশ্যক, বলিষ্ঠ যার ধারণ ক্ষমতা।।

সমাপ্ত
তন্বী হালদার – “ আমিই সেই ”
সাধন চট্টোপাধ্যায় – “ জঞ্জাল মঙ্গল ”
Close My Cart
Close Wishlist

Close
Navigation
Categories

Add address

India