সত্যপ্রিয় ঘোষ – “ দোলনা ”

বিভাগঃ ফিরে পড়া

illustration_13   ফাঁকা জায়গাটাকে পার্ক বানিয়ে ফেলতে হল। পাড়া-বেপাড়ার অবাধ্য ছেলেগুলোর খেলা বন্ধ করতে এটাই প্রকৃষ্ট পন্থা। নতুবা বাড়ির বাইরের দেয়ালের স্নো-সেম রঙে বলের ছোপ পড়ে, দুমদাম শব্দ, শার্সি ভাঙে, ঘরের মধ্যেই বল এসে যায়। এর হেস্তনেস্ত করতে মিউনিসিপ্যালিটির স্যাংশন আনতে প্রচুর তেল, গণদরখাস্ত। সিমেন্টের বেঞ্চি বসে গেল চারটে, লোহার শিকল লাগানো পাশাপাশি দুই দোলনা। দিনের বেলা শুধু দোলনার হকযুক্ত ছেলেমেয়ে দোল খাবে, রাতের প্রচ্ছায়া-উপচ্ছায়ায় ওদের মা-দিদারাও একটু। গাছ লাগাতে হল প্রচুর, সেগুলোতে ইটের ঘের। মানে যত পারো ভরাট করো, উড়নদাসেরা খেলতে না পারে। যেখানে ওরা বল সেন্টার করে বা উইকেট পোঁতে সেখানে গোল ক’রে বেদি, তারপর কৃষ্ণচূড়া, দেখতে দেখতে বেড়ে যাবে, ছাতা মেলবে। তবে এ-সব করা গেল মাত্র তিন ফ্ল্যাটমালিকের তৎপরতায়। অথচ আট ফ্ল্যাটযুক্ত অন্তত চারটে বাড়ির ফ্ল্যাটমালিক তো বত্রিশ, এরই নাম বাবু-মেন্টালিটি। ঠিক আছে, দোলনায় দোল খেতে এসো—  মজাটা বুঝিয়ে দেব তখন।

   বজ্জাতগুলো তাও খেলছে? বেঞ্চিগুলোতে হল মস্তানগুলোর আড্ডা। তোদের খিস্তি শোনার জন্য তপোবন বানালাম? এবার পুলিশ ডাকব? নেশার ঠেক বানালি বেদিটাকে! মগের মুল্লুক? এই গাছগুলোর তলায় তোদের পুঁতে ফেলতে পারি রে।

   অন্য ফ্ল্যাটগুলোর নিষ্ক্রিয় বাবুদের বাচ্চাগুলোই দেখছি বেশি দোল খাচ্ছে! আচ্ছা বেহায়া! তোদের বাপেদের তো পার্কের ব্যাপারে ডেকে পাওয়া যায়নি, একটা সই দিতেও কত বাহানা! আর এখন তোদের পাঠিয়ে দিচ্ছে দোল খেতে। খাওয়াচ্ছি। ট্রিপল্ তালা পড়ে গেল দোলনার শিকলিতে। দুই দোলনা এমনভাবে জড়িয়ে শিকলি, নে, এবার খা দেখি দোল।

    বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে তালা খুলে শুধু তিন ফ্ল্যাটের ছেলেমেয়েরা দোল খায়। তাই খাবে হে।

   একদিন এই নিয়ে ফাটাফাটি।

   ঠিক আছে। দরকার নেই দোলনায়। পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে এমন তালা এবার। দোলনা এখন তালাবন্ধই থাকবে! দরকার হলে চিরতরে।

   বছর তিনেকের মধ্যে দোলনা ঘিরে আগাছা। আগাছার বাড়! ওখানে সাপের বাসা হোক!

   এখন সেখানে, সেই জংলা দোলনায়, কাগজকুড়ুনি ছেলেমেয়ে হাড়হাবাতেগুলো দোল খায়। মরচেপড়া তালাবন্ধ দোলনা ঠিক দোলে না, ঘুরপাক খায়। গদিকালোগুলো তবু ওর ওপরেই দাঁড়িয়ে পড়ে। তেরছাভাবে দোল খেতে ওদের লজ্জা নেই। পারিসও বাবা! পরনে ধুকড়ি কানে মাকড়ি, চুল না ছন রে, তাতে লাল রিবন—  কারা তোদের জন্ম দেয় রে!

সমাপ্ত
সুমনজিৎ চট্টোপাধ্যায় – “ পোষা ডাস্টবিন ”
রাহুল দাশগুপ্ত – “ ডাস্টবিন ”
Close My Cart
Close Wishlist

Close
Navigation
Categories

Add address

India

Phone

Phone

WhatsApp

WhatsApp

Contact or Track
Hide