জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী – “ ঠাণ্ডা কি শীত ”

বিভাগঃ ফিরে পড়া
Unknown

শিল্পীঃ শান্তনু গাইন

হুঁ, চা খেতে আসে দুজনে। পাড়ার দোকান। একই টেবিলের এপাশে ওপাশে মুখোমুখি হয়ে সকালবেলা নোনতা বিস্কুট দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে চা খাওয়া। পাড়ার মানুষ। অথচ কথা নেই। পরিচিত। অথচ বন্ধুত্ব নেই। এমন হয়? হবে না কেন। এ ওকে চেনে, সে তাকে চেনে। কিন্তু আলাপসালাপের শিকলে সহজে কেউ পা জড়াতে চায় না। না ইনি। না উনি। কাজেই সতর্ক পা ফেলে এড়িয়ে এড়িয়ে চলা।

কিন্তু সেদিন সকালে কি করে যেন দুর্ঘটনা ঘটে গেল। মানে কথার সঙ্গে কথার ঠোক্কর। তাপ? ঘর্ষণজনিত বিদ্যুৎ সঞ্চার? যেন তা-ও কিছুটা হল।

উঃ, কাল বড্ড গরম গেছে।

বলেন কি মশাই, আমার যে কাল শীত করছিল।

অ্যাঁ! শীত করছিল। কাল কখন বলুন তো?

এই, রাত ন’টা।

আমিও তো তাই বলছি – তখন মোটেই শীত করার কথা না। দেহ অসুস্থ না থাকলে, মানে জ্বরটর গায়ে না থাকলে গরমে হাঁসফাঁস করার কথা।

আপনি হাঁসফাঁস করছিলেন বুঝি?

হুঁ, আপনি? শীতে কাঁপছিলেন?

ঠকঠক করে কাঁপছিলাম মশাই, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। সেই ঠাণ্ডা প্রায় হৃৎপিণ্ড ছুঁতে চলেছিল।

আশ্চর্য, আমি হাসব কি কাঁদব বুঝতে পারছি না, এত গরম, আর আপনি ঠাণ্ডায় মরছিলেন।

আমিও তো তাই ভাবছি, এত ঠাণ্ডা, আর গরমে আপনি – ? প্রেসার আছে বুঝি?

আছে বৈ কি। কাল তেষট্টি পেরিয়ে চৌষট্টিতে পা দেব, ওই জিনিস থাকবে না? হাসালেন।

লো?

হাই।

কাজেই এমন হতে পারে না। ককখনো না। একই সময়, একই পাড়া, একই বয়স, একই জাতের প্রেসার – অথচ আপনার এল কাঁপুনি দিয়ে শীত, আর আমার কিনা গরমে প্রাণ যায়।

আচ্ছা, রাত কটা তখন ঠিক করে বলুন তো?

বললুম তো, ন’টা, বড় জোর ন’টা পাঁচ কি সাত হবে। ও, হ্যাঁ, তখন আমাদের এই রাস্তা দিয়ে মেলা ঝাণ্ডাটাণ্ডা নিয়ে এতবড় একটা মিছিল যাচ্ছিল। দেখেছিলেন?

দেখেছিলাম, হুঁ, খুব দেখেছিলাম। তখন আমি আমার বারান্দায় দাঁড়িয়ে। দেখছিলাম এবং নানারকম আওয়াজে কানে তালাও লাগছিল।

ঠিক সেই সময়, ঝাণ্ডা উঁচিয়ে আওয়াজ দিতে দিতে যখন ওরা রাস্তাটা পার হয়। গরমে আমি মরছিলাম।

হুঁ, ঠিক তখনই, আওয়াজ দিতে দিতে ওরা রাস্তাটা পার হল কি দড়াম্ করে পটাকা ফাটল। রাস্তার ধারে গাছতলায় বুড়ো ভিকিরিটা খড়কুটো জ্বেলে চালেডালে সেদ্ধ করছিল – সেখানেই উপুড় হয়ে পড়ে গেল। ধোঁয়া, তারপর রক্ত। দেখে আমার এমন শীত করছিল। হৃৎপিণ্ড প্রায় ঠাণ্ডা হয়ে যাবার দশা!

তাই বলুন, মিছিলটা যখন রাস্তা পার হচ্ছিল তখন না, যখন পার হয়ে গেল, যখন দড়াম করে ওটা ফাটল, তখন আপনার ইয়ে করছিল।

ঐ একই কথা।

না দাদা, সময়ের এক সেকেন্ড এদিক ওদিক শরীরের অবস্থার বিশেষ করে এই বয়সে, বিশেষ করে প্রেসার থাকলে, মারাত্মক রকমফের ঘটে। আসুন –

এই বুড়ো সেই বুড়োকে সিগারেট বাড়িয়ে দিল।

সমাপ্ত
বিপ্লব মাজী – “ সম্পর্কের বীজগণিত ”
তৃষ্ণা বসাক – “ সাইবার সহচরী ”
Close My Cart
Close Wishlist

Close
Navigation
Categories

Add address

India