বিভাগঃ মুক্তগদ্য
মানুষ তার নিজের সমাজে সামাজিক, আর তার এই সমাজ বয়স , বুদ্ধি , লিঙ্গ, ধর্ম এমন আরও ব্রাত্য বহু বিষয়ে স্তরিভূত। এইসব সামাজিক শর্ত আর ব্যাক্তিগত পূরণ মেনে নিয়ে বামপক্ষের সাথে ডানপক্ষের মিলে যাওয়াই হল ‘সম্পর্ক’ । যা কিছু অজানা তা কে জানা বিষয়ের মেলবন্ধনে খুঁজে পাওয়া যায় ‘সম্পর্ক’-এর মধ্য দিয়ে ; শুধু বামপক্ষ আর ডানপক্ষের যথার্থতার ঠিক থাকাই বাঞ্ছনীয়। ‘সম্পর্ক’-এ কোন অব্যয় নেই তবে প্রত্যয় আছে, নিজের ছন্দে সুর বানানোর স্বস্তি আছে, তুই-তুমি-আপনি এই সর্বণাম গুলি ব্যাবহার করার ব্যাকরণ আছে। যে ‘সম্পর্ক’ একটি বিশেষ্য পদ , মৌখিক পরীক্ষায় আসে , তা অনেক সরল । কিন্তু সম্পর্ক যখনই ক্রিয়া পদ তখন সেটা জীবন যাপন হয়ে ওঠে।
এই দুনিয়ায় যতরকমের রোগ আছে ততরকমের সম্পর্ক আছে। ‘সম্পর্ক’ অনেকটা ঠিক কেন্নোর মত, একটু আঘাত পেলে নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নেয় । আর তাই যে কোন নতুন ‘সম্পর্ক’-কে প্রথমে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হয় নয়ত সে ততদিন গ্রহণযোগ্য নয় , অনেকটা ঠিক নতুন দেবদেবীদের ধরাধামে প্রতিষ্ঠা করার মত। কিছু সম্পর্ক একমুখী , কিছু বহুমুখী , কিছু স্বীকৃত, কিছু বিকৃত, যা পাওয়া যায়না তা পাওয়ার অধ্যাবশয় , তাকে প্রমাণ করার জেদে গড়ে ওঠে একটি সম্পর্ক । ‘সম্পর্ক’ কোনোভাবেই একজন মানুষকে সাহায্য করেনা নিজেকে জানতে । তবে সম্পর্ক দরকারি, কারন সম্পর্ক আনন্দ দেয় , পূর্ণতা দেয়, ছায়া দেয়, পিছুটান দেয় , পরিচিতি দেয়— অনেকটা ঠিক একটি সাদা কাপড়ের টুকরোয় সূচেঁর কাজ যেমনভাবে কাপড়টিকে আসনের মর্যাদা দেয়। সম্পর্ক মূল্যের একনিষ্ঠ দাবিদার, জীবনের বাঁকগুলোয় সম্পর্ক মূল্যবান হওয়ার দাবী করে , স্বীকারোক্তি চেয়ে বসে, আত্মত্যাগ অস্বীকার করে দেয় । কিছু সম্পর্ক-র মূল্য দেনমোহরে ঠিক হয় । তিনবার স্বীকারে উপস্থিত আবার তিনবার অস্বীকারে গায়েব । সম্পর্ক যখন কেবলমাত্র স্বীকার নির্ভর হয়ে পড়ে তখন সে পঙ্গুত্ব পায় আর তখন কিছু সম্পর্ক হয় ‘বেতাল’, কিছু শনি , কিছু যাবজ্জীবন ।
ফুসফুস অক্সিজেন চায় আর আত্মা সম্পর্ক । আত্মার সাথে শরীরের সম্পর্কটাও শুধুমাত্র অনুলোম বিলোমের সূক্ষ্ম সূতোয় বাঁধা । অনেকগুলো সম্পর্ক পর পর সজ্জিত হয়ে এক একটি মৌলিক নক্সা গঠন করে । মানুষ সেই সব নক্সা চিনুক বা না চিনুক , বুঝুক বা না বুঝুক সে সর্বকাল সকল সম্পর্ককে তকমা দিতে উৎসাহী । রবি-র সাথে ঠাকুর , ওয়াশিং পাউডারের সাথে নির্মা-র মতই অবৈধ শব্দের সাথে সম্পর্ক শব্দটাও অনেকটা সাইলেন্ট সাবকনসাসে ঢুকে গেছে , আর এটা মানুষ হয়ে আমাদের দূর্ভাগ্য ।
মানুষ সম্পর্কজাত কিন্তু সম্পর্ক কখনই মানবসৃষ্ঠ নয় । এই সম্পর্ক স্রষ্ঠার সাথে সৃষ্টির , যে সম্পর্কের ভূমিকা কোনো প্রমাণ বা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন বোধ করে না , তা স্বতঃসিদ্ধ । সূর্যের আলোয় যে যে সম্পর্ক প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠে তার প্রতিটিই সত্য হওয়ার দাবি রাখে কিন্তু মানুষের সেই সত্য অব্দি পৌছানোর কোনও দায় নেই।
সমাপ্ত