ডাস্টবিন’ আধুনিক মানব সভ্যতার সর্বাধিক ব্যবহৃত বস্তু। আগুন যদি আদিম মানুষের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ডাস্টবিন হল অত্যাধুনিক সভ্যতার মহান সৃষ্টি। আজকের সভ্যতা ডাস্টবিন ছাড়া অচল। একবার ভেবে দেখলেই বোঝা যায় যদি ডাস্টবিন না থাকত তাহলে এত মেকি সম্পর্ক, মুখের হাসি, ছেলেবেলার কাঁটা-কুঁটি খেলা, সভ্যতার অগ্রগতিতে মুখ থুবড়ে পড়া মানুষ, প্রতিদিনের ক্লান্তি, গালিগালাজ, ভদ্রতা, এত স্মৃতি, কোথায় ফেলত মানুষ! ডাস্টবিনের কল্যাণে মানুষ আজ মুক্ত। ঝাড়া হাত-পা। খবরের কাগজের পাতা ওলটালেই চোখে পড়ে এর বহুল ব্যবহার। বাতিল নোট থেকে সদ্যজাত শিশু, ধর্ষিত শরীর থেকে কন্ডোম্ সবকিছুরই শেষ আশ্রয় ডাস্টবিন। এখন তো আবার বাঁশিয়ালা ডাস্টবিন প্রতিদিন বাড়ি বয়ে নিয়ে যায় আবর্জনা। সকাল সকাল মনের জঞ্জাল, গ্লানি ডাস্টবিনে ঝেড়ে ফেলে পরিষ্কার ভাবে প্রস্তুত হতে হয় প্রতিদিনের প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে। ‘ডাস্টবিন’ সব দিক দিয়েই কল্যাণকর। কিছু সংখ্যক মানুষ যেমন তাদের অপ্রয়োজনীয় বস্তু ডাস্টবিনে ফেলে হয় আবর্জনা মুক্ত তেমনি কারোর কাছে পাঁচতারা রেস্তোরাঁ।
কখনও কল্পনা করতে বেশ লাগে, যদি ডাস্টবিন একটি প্রাণী হত। সকল আবর্জনা, জঞ্জাল, অপ্রয়োজনীয় পরিত্যক্ত বস্তু বয়ে নিয়ে চলেছে উন্নত সভ্যতার দিকে। ব্যস্ত সমাজে তার মতো ব্যস্ত আর কেউ নয়। সভ্যতা যত খোলস পরিবর্তন করে উন্নত হচ্ছে, ডাস্টবিন তত ঝুঁকে পড়ছে খোলসের ভারে। মনের দুর্গন্ধ ঢেকে আজও বাইরের মেকি হাসিই তার ভরসা। এই ভাবেই যুগ যুগ ধরে হাসি মুখেই বয়ে বেড়াতে হবে সকল আবর্জনা।
আজকের মহাভারতে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠীর দাঁড়িয়ে স্বর্গদ্বারে, পুষ্পক রথের অপেক্ষায়। নীচের ডাস্টবিন সম সমগ্র পৃথিবী চোখের সামনে। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার আত্মীয়-অনাত্মীয় প্রিয়জনদের স্তুপাকৃত লাশ। মাছিদের ভিড়ে শরীরগুলো ঝাপসা। কাকগুলো ক্রমাগত ঠুকরে চলেছে। পশ্চিমের আকাশে শকুনের আমন্ত্রণ বার্তা। শেষ যাত্রার একমাত্র সঙ্গী কুকুর রূপি ধর্মও একছুটে ভিড়ে গেল অন্য কুকুরদের সাথে। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। পুষ্পক রথ এল, কিন্তু ভিড়ের ঠেলায় আর ওঠা হয়ে উঠল না।
“কলিখাতা”-র প্রতিটি সংখ্যা নতুন ভাবনায়, নতুন রূপে পাঠকদের কাছে আত্মপ্রকাশ করে। তাই এই তৃতীয় সংখ্যায় আত্মপ্রকাশের ভাষা ‘ডাস্টবিন’। যেখানে নির্বাচিত লেখক মণ্ডলী সুকৌশলে রূপদান করেছেন এই ভাবনাটির। কোথাও তুলে ধরা হয়েছে ডাস্টবিনের ইতিহাস, কোথাও সুদূর ভবিষ্যতে ডাস্টবিনের অভাব মেটাতে নতুন গ্রহের সন্ধান, আবার বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয়ের ডাস্টবিন। কখনও শহরের ডাস্টবিনের বিরুদ্ধে গরুদের একত্রিত আন্দলন, তো আবার নিজেকে ডাস্টবিনের সমান ভেবে কুড়িয়ে বেঁচে থাকা এক মেয়ের গল্প। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মানুষের জীবন সবকিছুতেই ডাস্টবিনের ছোঁয়া। এই সবকিছু নিয়েই “কলিখাতা” তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে ‘ডাস্টবিনের’ বিভিন্ন রূপ। আপনারা পড়ুন, আলোচনা-সমালোচনা করুন, সাথে থাকুন। সাহায্য ও সহযোগিতায় সকলকে “কলিখাতা”-র ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ