নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় – “ অসীম ধন তো আছে ” ৩

নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় – “ অসীম ধন তো আছে ” ১

নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় – “ অসীম ধন তো আছে ” ২

অসীমবাবু, ব্যাপারটি কাব্যসাহিত্য চর্চার দিকে ঘুরিয়ে দিতে চান—  কিন্তু প্রসঙ্গ ঘুরে যেতে থাকে নানান দুষ্টু-দুষ্টু দিকে। দিল রওশান, এক বন্ধুর বোনের নাম—  হৃদয়ের স্নিগ্ধ জ্যোতি বা দ্যুতি তো বোঝা যায় সহজেই। কিন্তু স্কুল ম্যাগাজিনে খুব কায়দা করে আধুনিক কবিতা লিখেছে যে, কবিতা না-বোঝা রসিকরা বরং তার নামের অর্থ জানতে বেশি আগ্রহী। উম্মেনাদরা ফরজানা। উন্মাদে উন্মাদে বেরাদরির ব্যাপার নয়, এর অর্থ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা—  মেয়েটি সলজ্জ মুখে বলেছিল।

জানি না, আমিও এখানে সব ঠিকঠাক বলছি কী না, কেননা অসীমবাবু যে প্রবল লজ্জা পেয়ে বেজায় লাল হয়ে যাচ্ছিলেন, সেটাই বেশি করে মনে পড়ে। মৌলবী স্যার কিন্তু সমস্তটাই উপভোগ করছিলেন। তৎসম শব্দে ভরা আমার একটি ভাববাদী কবিতাও শুনলেন বেশ খুশি খুশি চোখে।

রমণীমোহমায়া জড়ানো ওই ভাববাদী কবিতা, ‘বারোমাস’ ও সাপ্তাহিক ‘অমৃত’ থেকে ঠোক্কর খেয়ে ফিরে আসা কবিতাটি ‘দেশ’-এ পাঠাব কি না ভাবছিলাম। অসীমবাবু খপ করে নিয়ে নিলেন স্কুল ম্যাগাজিনের জন্যে। ওতে তো একটি ভ্রমণবৃত্তান্ত দিয়ে রেখেছি—  সঙ্গে সুন্দর সুখপাঠ্য—  উন্মাদনা-মোহমায়া কি প্রকাশ পাওয়া ভাল? দ্বিধা কাটতে না কাটতেই বেরিয়ে গেল ম্যাগাজিন, কবিতাটি একদম আনকাট, অতি যত্নে ছাপা। কিন্তু গদ্যে, তখন কেমন ক্ষেপে গিয়েছিলাম ভেবে এখনও কান গরম হয়ে যাচ্ছে, নিখুঁতভাবে এডিট করা হয়েছে বাক্যাংশ। পাহাড়ি পথের হেয়ার-পিন-বেন্ড, বাংলা করে লিখেছিলাম মেয়েদের চুলের কাঁটার মতন বাঁক—  ওই মেয়েদের কাঁটা প্রসঙ্গটাই হাপিশ! তবু ভাল, ওই পথের বাঁকে লেখা কিছু সরস বাক্য, যথা Divorce Speed, if Married, বাদ যায়নি!

অভিমানী বালকের মতন ঘাড় বেঁকিয়ে রাখা অসীমবাবুর মুখ আজ মনে পড়ল, বড্ড মায়া লাগে। রমণীয় এই সংসার পথে, ঘাট-আঘাটায়, বনপথে বাঁশঝাড়ে কত না আছোলা বাঁশের ব্যবস্থাপনা—  পঞ্চাশোর্ধ হরেক সাহেবসুবোদের কতভাবে তেতো হতে হতে, সরে যেতে দেখি। অসীমবাবুদের ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ার-এর ধরণ আলাদা, কিন্তু অমনভাবে, মুখলাল হয়ে যেত আর কাউকে কি দেখেছি? চিত্তরঞ্জন সাহা নামে ইংরাজির আরেকজন স্যার ছিলেন বটে। ব্যাচেলার। থাকতেন শ্রীরামপুর। ছেলেরা যখন মজা করে বলত, স্যার, আপনার গোঁফটা ইকুইলিব্রিয়ামে নেই—  উনি বলে উঠতেন, একদম সময় পাই না রে! যাই হোক, সেই বিখ্যাত ব্যর্থ প্রেমের গল্প, স্যালভাটোর, পড়াতে পড়াতে উনি ক্যাবলা হয়ে যেতেন বেশ। ড্যামসেললল্—  বলে আনস্মার্ট হয়ে উঠতেন। গুডনেস! তবু আমার বলতে ইচ্ছে করে, মাই গুডনেস, লোকটা কবিতা টবিতা একদম বোঝে না গো! সবাই কি আর সংসারধর্ম না করলেই অসীমবাবু হন?

কলেজ জীবনে, নানান শিক্ষকদের ভেতরকার চোরাগোপ্তা দ্বন্দ-ঈর্ষা-সংঘাত অনেকসময়েই সামনে এসে পড়ে। বোর হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না ছাত্রছাত্রীদের—  তবু এখনকার এক অতি-খ্যাত সাংবাদিক, রবি-জীবনী কেচ্ছাকাহিনি লিখে বিতর্কিত, সে সময়ে হাওয়া গরম করতেন ট্র্যাডিশনাল বাংলা সিনেমাকে তুলোধোনা করে, দুর্দান্ত মন্তব্য করেছিলেন সমসাময়িক ডিপার্টমেন্টাল হেড-কে নিয়ে। ‘লোকটা এক লাইনও জীবনানন্দ পড়েনি, ভাবা যায়?’

কত কী না পড়েই তো কাটিয়ে দেয় জীবন কত মানুষ। পড়াশোনার সঙ্গে জীবনের ভিতর-বাহির আর কজনের মেলে?

Tripti Santra

শিল্পীঃ শান্তনু গাইন

সমাপ্ত
নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় – “ অসীম ধন তো আছে ” ২
সুমনজিৎ চট্টোপাধ্যায় – “ বিন্যাস ”
Close My Cart
Close Wishlist

Close
Navigation
Categories

Add address

India