সমীরণ কুণ্ডু – “ কালোভূত ”

বিভাগঃ গল্প

যে মোবাইল ফোনটি দীর্ঘ দশ বছর পরও রয়ে গেলো—  অন্তত প্রত্যহ লেখার সময় ভীষণ অনুগত—  ধারালো না হয়েও আমার বিচরণ সঙ্গী—  আন্তর্জাতিক, দেশীয় অথবা জেলা স্তরের যাই হোক না ক্যানো—  বিশেষ করে এমন অলৌকিক যা স্পর্শদানে আসক্তির—  সেই স্পর্শকাতরতা এখন অবশ্যি নেই—  তাঁকে ছুঁড়ে ফেলেছি বার কয়েক রাগ করে; আহত হবার পরও সাড়া দিয়ে গ্যাছে—

এখন পেপার ওয়েট

দ্যাখো লেখার সময় উদ্ভট ও অমূলক ভাবনার বশবর্তী আমি—  বিলাসী নয় তবু গভীর ক্ষতটুকুতে শুশ্রূষা ভালবাসি। আমার বাল্যকাল দ্যাখেনি সে; যা শুনেছে এবং এখন যা তুল্যমূল্য; তেমন কিছু নয়—  অনুমান নির্ভর কতগুলো বিচিত্র কণা, বিবর্তনের সাথে পৃথিবীর অনুষঙ্গে ওরই দিকে হাঁটছি।

খরিদ করার সময় পছন্দ তত্ত্বের সীমানা কতবার লঙ্ঘন করেছিলাম। সেই থেকে স্থান পরিবর্তনের বিধিসম্মত সতর্কীকরণ মেনে নিয়ে জড় নির্ভরতা ক্রমশ চেপে বসেছে।

সম্পর্কিত পেপারওয়েটটি আমি নিজে বয়ে বেড়াই। ওর সাংকেতিক মূল্যের অনুপাত ও সখ্য মেপে দেখেনি। দৃশ্যান্তরে হারিয়ে যাবার পর তাকে নিয়ে ভাববার মতো মানুষ কী থাকবে?

মূল্য ব্যবস্থাপনা ঠিক কোন দিকে যাবে অদূর ভবিষ্যতে; কে জানাবে? অথচ পেপারওয়েট জানে আমার সমস্ত অতীত। নাগরিক বার্তা-বিনিময়। মনঃসংযোগের কাছে লিখে যাওয়া উত্তর ইতিহাস কথা—  ওর ভূমিকা ও সন্তরণ; হঠাৎ করে বিষয় বদলের কারণ; বাতাসের নিরাকার ভঙ্গিমা নিয়ে মধ্যবর্তী চলাচল; নির্বাচিত অলঙ্কার সমূহ।

বিতর্ক ও দ্বন্দ্বের মাঝে কাল্পনিক আকারগুলি তবে কী? একবার ভ্রমণের সময় কবি অরুণ কুমার দত্ত এবং বিভাবসু একসঙ্গে বলেছিল—  ‘হাঁসেরাও ট্রাফিক পুলিশ’।

মোবাইলের রঙ প্রথম অবস্থায় ছিল কালো—  এখন বর্ণবিভ্রাট কিছু তো হয়েইছে—  অক্ষর সঞ্চালনের সময় ওর কাজ হ’ল ধৈর্যের আপেক্ষিক চরিত্র নিয়ে নিযুক্তিকরণ—  লিখতে বসে সাক্ষী রেখে বিচ্যুত হয়েছি অনেক। প্রতিবার সংরক্ষণের জোরালো নির্ভরতা বজায় রেখেছে। অথচ শুরুর দিকে তত বিশ্বস্ত ছিল না। আমার অবান্তর পৃথিবী হয়তো চিৎকার করেছে সে সময়; আমিই যোগাযোগ রাখতে পারিনি।

এটি নোকিয়ার একটি হারকিউলিস মডেল। গুপ্ত কারণে নাম বলা বারণ। এর আগে তিনবার মোবাইল ফোন হারিয়েছি। একবার গৌহাটি থেকে ফেরার সময় নিউকোচবিহার স্টেশনের আগে ট্রেনের কামরায়। ঘুমন্ত চোখে হিসু করতে টয়লেটে ঢুকেছি। সে সময় শীতকাল—  প্রচণ্ড গতিতে ট্রেন ছুটছিল। সাথেই ছিল, পকেট থেকে পড়ে নিমিষে ট্রেনের তলায় চলে গেল। একবার বর্ধমানে টানা রিক্সায়—  নামার অনেকক্ষণ পর দেখি নেই। অথচ রিক্সা চলাকালীন কথা বলেছিলাম। আরেকবার বর্ধমান রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থেকে নেমে বুঝতে পারি মোবাইল ফোনটি পিকপকেট হয়েছে। চীৎকার করেও লাভ হয়নি। ট্রেনে খুব ভিড় ছিল সেদিন। গঙ্গাসাগর সেরে পুণ্যার্থীরা ফিরছিলেন।

যেটি বলার; ওগুলো সবকটির আমার পেপারওয়েট হবার সম্ভাবনা ছিল। অবশ্য লাগে তো একটাই; —  এই কালো ভূতটি আমাকে ছেড়ে যেতে পারল না।

Samiran Kundu

শিল্পীঃ শান্তনু গাইন

ধন্যবাদ
সুমনজিৎ চট্টোপাধ্যায় – “ বিন্যাস ”
সত্যব্রত সিন্‌হা – ‘মেয়েটি’
Close My Cart
Close Wishlist

Close
Navigation
Categories

Add address

India