তন্বী হালদার – “ সঙ ” ৩

Song_01

শিল্পীঃ সুদীপ চক্রবর্তী

(৩)

বড়ো জিরাকপুর বিডিও অফিসের পাশে কুমীরের পিঠের মতো এই জায়গাখানা প্রেথ্থম থেকি মনে ধরিছিল কংসের। দল নে সে যখন বর্ধমান তালদি ছেড়ি ইখানে আসে তখন ভরা শীত। বিডিও কর্তার মৌখিক আদেশে আর গাঁয়ের লোকেদের আশকারায় এই কুমীরের পিঠের উপর চরি বসে কংস। খড়, বাঁশ, চ্যাঁচারি গাঁয়ের লোকেরাই জুটিয়ে দে ছিল। পলিথিন স্বয়ং বিডিও কর্তা। গড়ে ওঠে কংসের কারাগার। এই জমিটার ঠিক পেছনে একডা বড়ো পুকুর আছে। সিখান থেকেই রাঁধা, হাগা-মোতার জল আনে বিশাখা, ললিতারা। খাবার জল আনে বিডিও অফিসের টেপা কল থেকি। রাঁধু আনে। সত্যভামা সেই সাতসকালে একডা আস্ত খেঁজুরপাতা পুকুরে ফেলি রেখেছিল। বিকালবেলা সেটা হিড়হিড় করি টেনে এনি উঠোনে ফেললি দেখা যায় তাতি ফুল ফোঁটার মত গেঁড়ি-গুগলি জড়িয়ে আছে। তার মানে আজ রাতের মেনু গেঁড়ি-গুগলির ঝাল আর ভাত। গোল হয়ি সপ বসে পাতার গায়ে লেগে থাকা গেঁড়ি-গুগলি গুলো ছাড়াতি। লাট্টু ঘুমাচ্ছে বলে তাকে বিছানায় শুইয়ে রেখে কৃষ্ণও এসি বসে। বিশাখাই তখন কানেকানে ফিসফিস করি খবরডা দেয়। প্রেথ্থমটা শুনি বিশ্বাস করতি পারেনি কৃষ্ণ। বিশাখা বলে, ‘তুমি কিস্যু করতি পারবা নাগো ওরগো সুঙ্গি’। কৃষ্ণ জানতি চায়, ‘ওরগো মানী?’ বিশাখা নিচু গলায় বলে, ‘কংসদা আর আয়ান, লাট্টুকে ওরা দত্তক না কি বলে তাই দে টাকা নেবে। তিরিশ হাজার টাকায় রফা হয়েছে। যে লোকটা আর বৌটা নেবে তাদের কুনো বাচ্চা নেই তাই। বারাসাত থাকে। লোকটা নাকি সরকারি চাকরি করে’। কৃষ্ণ তবু জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কি করি জানলি?’ বিশাখা বলে, ‘আজ দুপুরি রাঁধু পা টিপতি গেছিল কংসদার কাছে। তখন সোহাগ খেতি খেতি হারামীটা বলি দেছে। আর রাঁধু কেমন পেট পাতলা জানো তো’।

সেই থেকি লাট্টুরে কোলে নে বসি আছে কৃষ্ণ। না সে কোনো মতেই লাট্টুকে কারো কাছে বেঁচতি দেবে না। রাতে খেতেও আসেনি। স্বয়ং কংস তাকে খেতি ডাকতি আসলে ইছামতীর ভরা কোটালের জলের মতো ফুঁসি ওঠে সে – ‘লাট্টুরে তোমরা বেঁচবার তাল করছো?’ কংস হাসি দে বলে, ‘মসকরা করছিস কেন? চ’ চ খাবি চ। খাওয়ার পর রেস্যালে বসবো। দোলের দিন শো আছে। এই উঠানেই মঞ্চ হবানে। আগাম নে নেওয়া হই গ্যাছে’। কৃষ্ণ কংসের কথায় টাল খায় না, বরং আরও শক্ত হই গে বলে, ‘লাট্টুকে তুমি বেঁচি দেচ্ছো কংসদা?’ কংসও খোলোস ছাড়ে, ‘ছেলানগিরি করিস না কৃষ্ণ। লাট্টুর বাপ লাট্টুরে দত্তক দেচ্ছে’। ‘তালি তুমি টাকা নেচ্ছো কেনো?’ গর্জে ওঠে কৃষ্ণ। ঠিক সে সময় ভুঁইফোড়ের মতো উদয় হয় আয়ান। ‘আমরা দু’জনেই লাট্টুর বাপ, তাই টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। তাতি তোর এত চুলকোচ্ছে কেন বাবা ত্রাহি মধুসূদন’। কৃষ্ণ প্রায় কোঁকিয়ে ওঠে বলে, ‘আমি লাট্টুর বাপ। ও আমার সুদর্শন। একে একে ভীড় জমিয়েছে রাঁধু, বিশাখা, ললিতারা সক্কলে। রাঁধু বলে, ‘এ তোমার ভারি অন্যায়’। দেখা যায় একমাত্র বিশাখা ছাড়া সক্কলেই কংস, আয়ানের পক্ষি।

রাত নিঝুম হলি, আকাশের গায়ে জরির ফুলের মতো তারাগুলো জেগি উঠলি কৃষ্ণ লাট্টুকে নে উঠোনে এসি বসে। আহা কি সোন্দর ঘুমাচ্ছে দেখো। ঠিক যেন দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ। বিশাখা এসি পাশে বসে। পিঠে হাত রাখে কৃষ্ণের। এতক্ষণ বশে থাকা কান্নাটা আগল ছাড়া হয়ে ভুঁইয়ে লুটিয়ে পড়ে। বিশাখা বলে, ‘ছেলেমানষি করিস না কেষ্টাদা। যেখানি যাবে সেখানি লাট্টু রাজা হই থাকপে। তুই লাট্টুর মায়া ত্যাগ দে। ওরে ওর নোতুন বাপ, মার হাতে তুলি দে’। লাট্টুর শরীরের গন্ধ প্রাণ ভরে সারারাত ধরি নেয় কৃষ্ণ। বলে, ‘বেশ আমি সুদর্শনকে ছেড়ে দেব। তবে এট্টা শর্ত, এই দোলে রাধাকৃষ্ণের লীলা না, হবে কৃষ্ণের যশোদা মায়ের হাতে তুলি দেওয়ার পালা। উই দিনিই লাট্টুরে আমি নিজি হাতে তুলি দেবো ওর নতুন বাপ-মায়ের হাতে’।

ক্রমশ প্রকাশ্য...
তন্বী হালদার – “ সঙ ” ২
তন্বী হালদার – “ সঙ ” ৪
Close My Cart
Close Wishlist
Recently Viewed Close

Close
Navigation
Categories

Add address

India