তন্বী হালদার – “ সঙ ” ৪

soong_02

শিল্পীঃ সুদীপ চক্রবর্তী

(৪)

নিমরাজি হলেও সক্কলে শেষ পর্যন্ত সায় দেছিল, বেশ ‘মা যশোদার গৃহে যাত্রা’ পালাই হবে। কৃষ্ণ বলে, ‘ন্যাকড়ার পুতুল না স্বয়ং লাট্টুরে নে অভিনয় হবে। আর বাসুদেবের পার্ট করব আমি’। আয়ানের গা জ্বললেও চুপচাপ মেনি নেয়। কৃষ্ণ উল্লাস করি বলে, ‘কংসের কারগার থেকি আজ কৃষ্ণ নয় সুদর্শনের মুক্তি’। ঠিক হয় যারা লাট্টুরে দত্তক নেবে, তারা মঞ্চের বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে থাকবে, কৃষ্ণ গে তাগো হাতে লাট্টুরে তুলি দেবে।

কৃষ্ণ আজ বসিরহাট বাজারে গে লাট্টুর জন্যি নতুন জামা, খেলনা কিনি আনিছে। আজ যেন তার আর ফুর্তি ধরে না। সারাদিন রঙের হুল্লোর করি গাঁয়ের লোকেরা রাধা-কৃষ্ণের লীলার বদলে ‘মা যশোদার গৃহে যাত্রা’ দেখতি গে খেপেই উঠেছিল। কৃষ্ণই তাদের শান্ত করে। বসুদেবের চরিত্রে কৃষ্ণের প্রাণ কারা হাহাকার করা অভিনয় সক্কলের মন কেড়ি নেয়। স্টেজির উপর টাকার বৃষ্টি পড়ে। রাংতার মুকুটে লাট্টুকে সাতরাজার ধন এক মানিক লাগে। কৃষ্ণের অভিনয় দেখি লাট্টুরে দত্তক নীতি আসা বাপ-মাও চোখের জল মোছে। কথামতো কৃষ্ণ ওদের হাতে তুলি দেয় তার সুদর্শনরে। কৃষ্ণ দেখে বৌটা বুকে চেপি দু’হাত জড়ো করি নমো জানায় কৃষ্ণকে। আহা বৌটার কোলে কি সুন্দর লাগছে বাছাকে। ঠিক যেন মা যশোদার কোলে ‘বাল গোপাল’। বোকার মতো কৃষ্ণও হাত জোড় করে। একসময় ভুস করি একডা চার চাকার আওয়াজ হলি পরে, বিশাখা এসি বলে, ‘ঘরে চ’ কেষ্টাদা। লাট্টুরে ওরা নে গেছে’।

লাট্টুর জন্মের পর এই প্রেথ্থম মদ খেল কৃষ্ণ। লাট্টুর গায়ের দুধ-দুধ গন্ধটা ভুলতে। কড়কড়ে তিরিশ হাজার টাকা আর সাত জায়গায় পালার আমন্ত্রণে ‘কংসের কারাগারে’ আজ আমোদের বান ডেকেছে। নেশা করি এ ওর গায়ে লুটিয়ে আছে। অতগুলো মদ্দালোকের নাকডাকার শব্দে মনে হচ্ছে পৃথিবীখানাই বুঝি কেঁপি উঠবে। শুধু ঘুম নেই কৃষ্ণের দু’চোখে। সে লাট্টুর ছোটো ছোটো জামা, কাঁথাগুলো বুকির মধ্যি চেপি টলতি, টলতি ‘কংসের কারাগার’ থেকি বেড়িয়ে আসে। চাঁদটা আকাশে রুপোর থাল হয়ি ঝুলি আছে। কুমীরের পিঠের মতো জমিটা থেকি হামাগুড়ি দে পুকুরের দিকে নামতি থাকে। কি আশ্চর্যি! জলের মধ্যিও অবিকল আর এট্টা চাঁদ। খিলখিল করি নিজির মনি হাসে কৃষ্ণ, ‘দুটো চাঁদ’। আচ্ছা চাঁদ যদি দুটো হয় লাট্টু তালি দুটো হতি পারে না কেন? আলবাৎ হবে। তাছাড়া কে কবে দেখেছে যে কৃষ্ণের হাতে সুদর্শন নেই। ঐ তো সুদর্শন। পুকুরের জলের মধ্যি চাঁদটার তলে। ‘আসতিছি মানিক। বাপ আমার। এখনই আসতিছি। এট্টুস সবুর কর’। সরসর করি জলের মধ্যি নেমি যায় কৃষ্ণ। যত নামে তত সে লাট্টুরে দেখতি পায়। পা জল, কোমর জল, গলা জল, ডুব জল।

আর দশটা সকালের মতোই সকাল হয়েছিল বড়ো জিরাকপুর গ্রামটায়। ‘কংসের কারাগারের’ও এক এক করি ঘুম ভাঙছিল সকলের। দাঁত মেজি কুলকুচি করি সত্যভামা, ললিতা পুকুর থেকি চলিও আসে। কিন্তু চোখ আটকে যায় বিশাখার। পুকুরের ওপার ঘেষি কি ভাসতেছে ওডা! মানুষপানা লাগতেছে না? গো গো করি ওঠে বিশাখা। আউ আউ করি ফিরি এসি ‘কেষ্টাদা’ বলি চিক্কুর মারে। না কৃষ্ণ কোথাও নেই। কেন থাকবে। এই ত্রিসংসারে কোথাও কি কংস এমন কারাগার বানাতি পেরিছে যেখানি কৃষ্ণরে ধরি রাখা যায়। গাঁয়ের লোক আজ এখানে ভেঙি পড়িছে। সক্কলের চোখে জল। কংস শুধু আয়ানরে পরামর্শ দেয়, ‘মওকা বুঝি কেটি পর’। এট্টুস পর পুলিশ আসবানে। ভগবানের লাশ নে যাওয়া হবে কাটা ছেঁড়ার জন্যি’। তবে সকালবেলায় এই ধরাধামের কোথাও কি হরিতলায় জল দিতি গে কেউ সুর করি গাইছে না! …

‘শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন

যশোদা রাখিল নাম যাদু বাছাধন

উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর গোপাল

ব্রজ বালক নাম রাখে ঠাকুর রাখাল

……………………………………’।

সমাপ্ত

 

তন্বী হালদার – “ সঙ ” ৩
গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়- “ এখন মন দখলের দিন ”
Close My Cart
Close Wishlist
Recently Viewed Close

Close
Navigation
Categories

Add address

India