তন্বী হালদার – “ আমিই সেই ”

হারগিলে সরু সরু শিরা উপশিরার মতো গলিঘুঁজি বেয়ে বেয়ে ধেয়ে আসছে অদ্ভুত এক গন্ধ। গন্ধটা অনেকদিন, না না আমার জন্ম থেকে এযাবৎ আমাকে তাড়া করে ফেরে। আমি জানি এই গন্ধটা কিসের। গন্ধটা তিনদিনের জলে ডোবা মানুষ পচার গন্ধ। অবশ্য তার আগে অনেক রকম গন্ধের সঙ্গে আমি পরিচিত হয়েছি। ভাদ্রের প্যাঁচপ্যাঁচে গরমে ঝিম মেরে থাকা যাবতীয় অশুচিময়তা আমাকে ঘিরে থাকে সবসময়। আমার পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে পথচারী থুতু ফেলে। লিপস্টিক বাঁচিয়ে মুখে রুমাল চাপা দেয় ফেসবুকের মহিলা কবি। পুরুষ কবি তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যবান / স্বাস্থ্যবতী রজনীগন্ধার ডাঁটী ডাউনলোড করে মহিলা কবির নাকের গর্তের সামনে ধরে। বেশ লাগে। সম্প্রতি কি এক পরিষ্কার অভিযানে গদ্যকারদের ডাকা হয়েছিল। বলা হয়েছিল “কিছু লেখো তো বাপু”। তা সেখানে তো এখন সিন্ডিকেট রাজ। তাদের আমার গন্ধে উল্টি আসে না। তারা তাড়িয়ে তাড়িয়ে আমার ভেতরকার এক পৃথিবী যন্ত্রণার জঞ্জাল নিয়ে গদ্য মারায়। কোনোসময়ে কখনও কোনো দুর্বল মুহূর্তে আমি কি কোনো গদ্যশিল্পীকে বলেছিলাম, ‘জানেন আমি জন্ম থেকেই বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো পাবলিক। আমার কোনো অতীত নেই, ছ্যা ছ্যা করা বর্তমান, আর ভবিষ্যতের গর্ভে সেই ক্লকওয়াইজ ঘুরে ফিরে নৃত্য করে ‘তিন দিনের বাসি পচা লাশের গন্ধ’। আমার ভেতর সবসময় উ উ করে গুঞ্জন করে এক ঝাঁক ডাঁশ গুয়েমাছি। একবার একটা বাচ্চা মেয়ে মায়ের হাত ধরে আমার পাশ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল। তার মা মেয়ের মুখে চেপে রেখেছিল সুগন্ধী রুমাল। তবু বাচ্চামেয়েটা সেই রুমাল সরিয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘মা ওর ভেতরে উ উ করে কে কাঁদছে?’

          সামনে পড়ে আছে যে ডাঁই করে রাখা অযুত অন্ধকার তার মধ্যে মশার লার্ভার মতো কিলবিল করছে মানুষের ভ্রুণ। সামনে অতর্কিতে ঊঁকি দেয় ছেঁড়া পোস্টার। লেখা আছে ‘কন্যা ভ্রুণ হত্যা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ’। আমার চোখের পাতা নেই। মাছের মতো আমি তাই জেগে আছি আদি, অনাদি কাল ধরে। আমার চোখের সামনে প্রতিদিন হাঁসের ডিমের রঙের সূর্যটা ওঠে, তারা ভরা রাত, সাদা জ্যোৎস্নার রাত সব পার হয়। আমার শরীরের ভুলভুলাইয়ায় দাবী রেখে যায় ভীতু কবি আবার কখনও সিন্ডিকেট গদ্যকার। আমি নির্বিকার। কারণ আমি জানি আমি কে? আমি, আমি। আমি সে। হ্যাঁ আমিই সে। আমি কখনও তুমি নই। তুই না। না আপনিও না। আমি একমাত্র সে। তাই আমার ভেতরে আনায়াসে ফেলে দিয়ে যায় সদ্যজাত অবাঞ্ছিত শিশুকন্যা। তাকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছে তিনটে কুকুর। আচমকা তিন দিনের জলে ডোবা বাসি লাশের গন্ধে উস্কে দিয়ে যায় ‘সে আমাকে ছেড়ে যায়নি এখনও……………’।

illustration_08ো

শিল্পীঃ সুদীপ চক্রবর্তী

সমাপ্ত
শুভংকর গুহ – “ মানুষের মাংস ” ৩
স্বাতী গুপ্ত – “সম্পর্কের ডাস্টবিন ”
Close My Cart
Close Wishlist

Close
Navigation
Categories

Add address

India