পেঁচাটা ডাকছে নিম। নিম। নিম।

শিল্পীঃ সুদীপ চক্রবর্তী
ছেঁড়া তুলো বের হওয়া ডাস্টবিন তোষকে পাশ ফিরল অমিতা রাণী। পেঁচাটা বোধ হয় ওই কৃষ্ণচূড়া গাছটাতে বসে ডাকছে না ওই যজ্ঞ ডুমুরের গাছটাতে কে জানে? আছে তো এখানে বেশ কয়েকটাই গাছ। গত ঝড়ে জড় সহ উল্টে পড়ল বটগাছটা আহারে! দেখে বড় কষ্ট হয়েছিল অমিতা রাণীর। কত পাখ-পাখালি বাসা বাড়ি ঘর-সংসার ছিল এই গাছটিতে হায়রে… পেঁচাটা এখন বিড়ালের মতো ডাকছে। আগে এই নিম পেঁচা ডাকলে সুখদা মাসি বড় ভয় পেত। বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলত কু ডাক রে কু ডাক। কার যে সর্বনাশ হইব। পেঁচাকে ভাগাবার জন্য হলুদ দিত চুলোয়। যা। যা। যা। আবার পাশ ফিরল অমিতা রাণী। কার বাড়িতে ঢোলক বাজিয়ে বিয়ের গান গাইছে মেয়েরা…
ঢুল বাজে আকাশে
দুতারা বাজে দামাদর বাসরে
মৃদঙ্গ বাজে দামাদর নবীন শ্বশুর দেশেতে
কে একজন সঙ্গে এখন দোতারাও বাজাচ্ছে…
আমার দামাদ বড় হাউসিয়া
আয়না কাকই আনদইন দামাদে বাছিয়া
আমার দামাদ বড় হাউসিয়া
চুলের ফিতা আনদইন দামাদে বাছিয়া
নাকের নুলুক আনদইন দামাদে সুন্দরীর লাগিয়া…
আবার পাশ ফিরল অমিতা রাণী। ভাঙা টিনের দরজা দিয়ে এখন বরাক নদীর হিমেল বাতাস হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। অমিতা রাণীর ছয় বাই চার হাতের ঘরটাতে! ঘরটার অ্যাসবেসটারের ছাদে কতটা যে ফোকর। গেলবার অভয়তারিণী পুজো কমিটির ব্যানারটা রাস্তায় পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে দেখে তুলে এনেছিল অমিতা রাণী। ঘুগনিওয়ালা রতীশকে বলে কয়ে ভাই দাদা ডেকে ওই ব্যানারটা দিয়ে ফুটোটা ঢেকেছে ইটচাপা দিয়ে। তবু বাঁদিকের ফুটোটা দিয়ে এখনও বৃষ্টি হলে গদ গদ করে জল পড়ে। ভিজে যায় বিছানা সব জিনিসপত্র। থালা বাটি তখন সব পেতে দেয় অমিতা রাণী। পড় কত পড়বি। পড়। পড়। আর এই ঘরের জন্যই মাসে পাঁচশ টাকা গুনতে হয় অমিতা রাণীকে। ভাঙাচোরা তো কি? বললেও ঠিক করিয়ে দেয় না। ওই তো পাশেই থাকে মালিকিনী সবিতা রাণী। আজ মেয়ের অধিবাস। কিন্তু একবারও ডাকল না অমিতা রাণীকে। ঝগড়া তো কি? কাল ওই জল নিয়ে ঝগড়া হল। মাস খানেক হল নিজের উঠোনে জলের কানেকশন নিয়েছে। কিন্তু ভাড়াটে কাউকে জল নিতে দেয় না। বলে রাস্তা থেকে আনো। কিন্তু রাস্তায় এত লম্বা লাইন যে জল পেতে হলে সকালের দুবাড়ির কাজই বাদ পড়ে যাবে। তাই কাল এল্যুমিনিয়ামের কলশিটা পেতে দিল অমিতা রাণী। তখনও জল আসেনি।
সরা তোর কলস।
এক কলসই তো লইমু।
কইসি সরা। নইলে লাথ মারিয়া ফালায় দিমু।
কিতা কইলায় লাথ মারবায়? মারও দেখি লাথ। অমিতা রাণীও কম যায় না।
তোর সাহস কেমনে হইল। এখন বাইর হো আমার ঘর থাকিয়া।
তোর ঘরও এমনে থাকিনি বেটি ভাড়া দিয়া থাকি।
হল্লা শুনে সব ভাড়াটেরা বের হয়ে এসেছিল। এসেছিল ঘুগনিওয়ালা রতীশও।
কিতা কইলে আঁটুকুড়ি ছিনাল বেটি। এর লগি জামাই-এ ছাড়িয়ে গেসে।
কিতা কইলে? আবার কসাইন। আবার ক।
কিতা করবে তুই? কিতা করবে?
অনেক মানুষ জমে গিয়েছিল। শেষে রতীশের বউ অমিতা রাণীকে টেনে না নিয়ে এলে যে কি ঘটত কে জানে। নির্ঘাত মারামারি হত। কাল তো রাস্তার কলে একটা মারামারির ঘটনা ঘটেই গেল। সুদামের মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দিল রতনের মা।
ক্রমশ প্রকাশ্য...