স্বাতী গুপ্ত – “ খুলে দাও লক গেট ”

বিভাগঃ মুক্তগদ্য
IMG_20171015_231623

শিল্পীঃ বিজয় দাস

আদিম অরণ্যভূমি প্রতি মুহূর্ত বিপদ সংকুল একা মানুষ সে বোঝে পেটের খিদে আর নিরাপত্তা। সৃষ্টির শুরুতে প্রতিটি মানুষ ছিল একা। এরপর গোষ্ঠী দল গড়ে ওঠে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান আর যৌনতা এই হল প্রাথমিক চাহিদা। সম্পর্কের ভিত্তি। বহু পথ পার করে আজ সম্পর্ক একটি প্রতিষ্ঠান। মানুষের জীবনকে একটা শৃঙ্খলা দিতে আদিমতা থেকে সভ্যতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই সম্পর্ক নামক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়। কবে কোথায় কিভাবে সম্পর্ক সৃষ্টি হল ইতিহাস জানে সেই কথা। আজ আমরা জানি সম্পর্ক জন্মগত, সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক আর বাকি অর্জিত। আর প্রত্যেকটি সম্পর্কের একটাই দায়বদ্ধতা নির্ভরতা এবং পারস্পরিক বিশ্বাস। বিশ্বায়নের যুগে বাইরের দেশ গুলোতে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান-এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। বর্তমানে আমাদের তৃতীয় বিশ্বের এই সমাজের একটু উপরের দিকে তাকালে বা নতুন প্রজন্মর এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস আস্থা বা এর প্রয়োজনীয়তা কমে আসছে মনে হয়। এখন একা মা-ই একটি শিশুর জন্ম দিয়ে বড় করে তুলতে পারে, পিতৃপরিচয়-এর প্রয়োজন নেই। আইনত। তবুও সমাজের কিছু প্রাচীন স্থুল মানসিকতায় এই সম্পর্কগুলো আঘাত করে। নতুনকে সব সময়েই একটা লড়াই-এর অবজ্ঞার মধ্যে দিয়েই জায়গা করে নিতে হবে। যেমন কিছু শতাব্দী আগে প্রেমজ বিবাহ নিষিদ্ধ বলেই মনে করা হত কিন্তু বর্তমানে সেগুলো স্বাভাবিক ভাবেই সমাজের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিছুটা পেছনে ফিরে তাকালেই দেখা যায় অসবর্ণের বিবাহ নিয়ে সমাজের বিধিনিষেধ আর এক ঘরে করে দেওয়া। আজকের দিনে এগুলো অতি সাধারণ স্বাভাবিক। অর্থাৎ সম্পর্কের লক গেট গুলো খুলে গেছে। আরো সহজ ও স্বাভাবিক হওয়া উচিত প্রতিটি সম্পর্ক। কিছু সম্পর্কের নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে যেটা লঙ্ঘন করা নাকি পাপ। প্রশ্ন জাগে এই সীমা দাগ কেটে ছিলো মানুষই একদিন নিজের প্রয়োজনে সমাজের প্রয়োজনে। এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সম্পর্ক গড়ে তোলে। কর্মক্ষেত্রেও এক ভিন্ন পরিবেশে সম্পর্ক। আর কেবল মানুষে মানুষে নয় এই প্রকৃতির সাথে এক অভিন্ন সম্পর্ক আদিম মানব শিশুর। একটি নবজাতক যখন জন্মায় বর্ণ গোষ্ঠী ধর্ম জাতি কিছুই তাকে দেখে বোঝা যায় না। কর্মসূত্রে দেখেছি মায়ের হাতের নম্বর বাচ্চার হাতেও থাকে আর এটাই সম্পর্ক। শিশুর ধর্ম জাতি হয় না। সে সম্পর্ক বোঝে যে মাতৃস্তন পান করায়। তাকেই চেনে গায়ের গন্ধে।
আজ আমাদের সভ্যতার রথ অনেকটাই এগিয়ে এসেছে কিন্তু আমরা কি সম্পর্ক গুলোর মূল্যবোধ ধরে রাখতে সঠিক অর্থে পারছি। নাকি বহু বছর ধরে এই সম্পর্কের সীমারেখায় আবদ্ধ সমাজে এবার এক নতুন আলো চাইছে। যেখানে প্রতিটি সম্পর্ক স্বেচ্ছায় গৃহীত হবে কোন সম্পর্ক বোঝা হয়ে বয়ে চলতে হবে না আজীবন। লেসবিয়ান এবং গে যারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে বহুকাল। প্রত্যেক মানুষের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকা উচিত। নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টিতে কবিতার যেমন পরিবর্তন ঘটছে ঠিক তেমনি সমাজের পরিবর্তনও ঘটে চেলেছে, ধীর এই পরিবর্তন। সম্পর্কের স্থায়িত্ব কতটা সময় সেটা বিবেচ্য নয়। যতটাই হোক সম্পর্কের মাধুর্য যেন বজায় থাকে। তিক্ততা যেন সম্পর্ককে জীবনের বোঝা করে না তোলে। প্রতিটি নদী উৎস থেকে নির্দিষ্ট গতিপথে মোহনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দু’পাড়ের ইতিহাস হাসি কান্নার স্তূপাকার বোঝায় কখনও নদী বালুচরে গতিহারায়। তবুও প্রতিটি নদীর একটা নিজস্ব গন্ধ আছে ঠিক যেমন ফুল বাগানে হাজারো ফুলের আলাদা সৌরভ প্রতি সম্পর্ক ঠিক তেমনি নিজস্বতায় ভরপুর।

সমাপ্ত

 

তৃপ্তি সান্ত্রা – “ সাদাকালো অ্যালবাম দিন ” ২
“সম্পাদকের কথা” – প্রথম বর্ষ ।। প্রথম সংখ্যা ।। চৈত্র ১৪২২
Close My Cart
Close Wishlist
Recently Viewed Close

Close
Navigation
Categories

Add address

India