সত্যব্রত সিন্‌হা – ‘কৈখালি:সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার’

1

একাকী

ছাইরঙা আকাশে সূর্যদেব আজ সারাদিনই মুখ লুকিয়েছে। মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে বৃষ্টি একলহমায় প্রকৃতিকে ভিজিয়ে  দিয়ে আবার লুকিয়ে পড়ছে। নদীর বুক চিরে কেমন একটা ঠান্ডা বাতাস ম্যানগ্রোভ অরন্যে দোলা দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। নদীতট, জলাভূমি, সবুজ বনানী, ধানক্ষেত সব মিলিয়ে এ এক অনন্য ভূ-প্রকৃতি। দুরন্ত মাতলা আর কাঁটামারি মিশেছে কৈখালিতে; অদূরে এই মিলিত প্রবাহের সাথে যুক্ত হয়েছে নিমানিয়া। অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি দিকচক্রবাল যেখানে মিশেছে বিপুল জলরাশিতে… মুগ্ধ দৃষ্টি মূর্ত আর বিমূর্তের সাঁকো তৈরি করে। পরম যত্নে কোনো শিল্পী যেন তার তুলির টানে সৃষ্টি  করেছেন এ ক্যানভাস। শান্তি এখানে নিসর্গের চিত্র আঁকে। কৈখালির কুমারী সারল্যে মুঠোফোনও লজ্জায় নির্বাক হয়ে থাকে। দু/এক দিনের ছুটিতে প্রকৃতি সান্নিধ্য মনের চিকনপাতায় খুশির রঙে রামধনু আঁকে।

2

রামকৃষ্ণ মন্দির

বাঁধের রাস্তা ধরে বাঁদিকে একাধারে উচ্ছল মাতলা আর অন্যদিকে মখমলের মতো সবুজ তৃনভূমি, ধানক্ষেত, সাদা, বেগুনি শালুক-শ্যাপলার জলজ বাজনা নির্জনতার কবিতা লেখে। ডানদিকে রামকৃষ্ণ আশ্রমের সামনের ফেরিঘাট থেকে ইচ্ছে হলে কোনো এক নৌকায় সওয়ার হয়ে ভেসে পড়তে পারেন এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে। নিষিদ্ধতার নিয়ম ভেঙে অরণ্য সঙ্গমে পথ হারায় আঁচল ওড়ানো নদী। বিচ্ছুরিত তরঙ্গে স্থানিক বন্ধন কাটিয়ে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে ভূগোল বইয়ের নির্বাক পাতা।

বাঁধের রাস্তা ধরে আরও কিছুটা এগিয়ে নীচে নামলেই ছোট্ট একটি হাট; মাঝখানে চণ্ডীমন্ডপ; তাকে কেন্দ্র করে পসরা সাজিয়ে ছোট ছোট দোকান, মানুষ-মানুষীর রোজনামচা… গ্রাম বাংলার চলমান জীবনের এক খন্ডচিত্র।

3

শালুক রাশি রাশি

কোলকাতা থেকে 150কিমি দক্ষিণে কৈখালি। নদীর ওপারে Sundarbans tiger reserve area। তিন/চার ঘন্টার জল সফরে ঘুরে আসা যেতে পারে সূর্যমুখী খাঁড়ি পেরিয়ে ঝড়খালি পার্ক। এখানে দেখবেন নয়নাভিরাম এক ম্যানগ্রোভ নার্সারি; সাথে নানা ধরনের নৌকার অসাধারন প্রদর্শনশালা।

5

জলসফরের সাথী

দিনের শেষে নদীর বুকে অস্তরাগের ছটা। গোধূলির শেষ আলো একটু একটু করে নদীর জলে মিশে যাচ্ছে। নৈঃশব্দের নিঝুম গাঢ় অন্ধকার।হাজার জোনাকির মালা পড়ে মাতলা নদীর মাতাল দুকূল… মাথার উপর লক্ষ তারা টিপটিপ করে চেয়ে দেখে এই পার্থিব সৌন্দর্য। রাত যত বাড়ে নির্জনতা তত ঘিরে ধরে। নদীর ছলাৎ ছলাৎ; সাথে মধ্যরাতের অঝোর বর্ষনের বৃন্দ সংগীত: আজ ফাগুনি পূর্ণিমা রাতে চল পলায়ে যাই…

4

ম্যানগ্রোভ

ভোরের ঘুম ভাঙে কল্পনার নিকোনো আকাশে প্রথম আলোর টোকায়। ব্যালকনি থেকে প্রানভরে দেখি অন্তহীন মাতলাকে, এর বিশালতার কাছে দাঁড়িয়ে বিস্ময়-বিহ্বল মুগ্ধতায় “মন বলে চাই চাইগো, যারে আমি পাইগো।” সকালের স্নিগ্ধ আলোয় পায়ে পায়ে সুবিশাল আশ্রম চত্বর ঘুরতে ভালোই লাগে। চারিদিকে বড় বড় গাছ আর বেগুনি, নীল, সাদা ফুল কেয়ারি করা রাস্তার পাশে। চোখ-জুড়ানো তাদের রঙের বৈচিত্র্য। খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট ছোট ঘর; ফার্ম হাউস সব মিলিয়ে বুধানন্দজী মহারাজ প্রতিষ্ঠিত এইআশ্রম পর্যটকদের কাছে এক অতিরিক্ত উপহার।

দুদিনের ছুটি শেষ হয়ে এল। অনাবিষ্কৃত প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধের আস্বাদটুকু নিয়ে আপনভোলা প্রাণ ফেরার অপেক্ষায়… পেছনে পড়ে থাকল দিগন্তজোড়া সবুজ ক্ষেত, মেঠো আলপথ, দুরন্ত মাতলা, আবছায়াতে সরল গ্রাম্য মানুষের মেদুর অনুভূতি…

WhatsApp Image 2020-05-03 at 9.59.34 PM

রামকৃষ্ণ আশ্রম

সমাপ্ত
বিজয় দাস – ‘কোয়ারেন্টাইনে পৃথিবী’
বিজয় দাস – ‘ইসমাইল কাদারের সাহিত্য ভাবনা ও ‘দ্যা জেনারল অব দি ডেড আর্মি’’
Close My Cart
Close Wishlist
Recently Viewed Close

Close
Navigation
Categories

Add address

India